গাইবান্ধায় জেগে উঠা চরে বাড়ছে বাদামের চাষ।

গাইবান্ধায় জেগে উঠা চরে বাড়ছে
বাদামের চাষ।

সাগর আহম্মেদ গাইবান্ধা প্রতিনিধি:-

উত্তরের চরাঞ্চল বেষ্টিত অন্যতম জেলা গাইবান্ধা। এ জেলার চারটি উপজেলায় ছোট-বড় মিলে ১৬৫ টি চর ও দ্বীপচর রয়েছে। চলতি মৌসুমে সুন্দরগঞ্জের তিস্তা, সদরের ব্রহ্মপুত্র, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার যমুনার নদী পানি শুকিয়ে জেগে উঠছে অসংখ্য বালু চর। এসব বালুচরে বাদাম চাষ করছেন চাষীরা।

গেল বছর বাদামের বাম্পার ফলন হওয়ায় পাশাপাশি বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা বাদাম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তাছাড়া উজানের পাহাড়ি ঢলে জমিতে পলি পড়ায় এ বছর বাদাম চাষ গত বছরের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে গাইবান্ধা সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি চর ঘুরে দেখা গেছে, ধুধু বালুচর সবুজে ছেয়ে গেছে। চারিদিকে শুধু বাদামের চাষ। এ উপজেলার মোল্লারচর ইউনিয়নের সিদাই, বাজে চিথুলিয়া, কড়াইবাড়ি, বাটিকামারি, হাঁস ধরা, চিথুলিয়া দীঘর সহ বিভিন্ন চরে ব্যাপক বাদামের চাষ হয়েছে। এছাড়াও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার লাটশাল্লা, কাপাসিয়াচর, বালাসেরা, কাজিয়ার ,খয়দার এবং ফুলছড়ি উপজেলার এড়েন্ডাবাড়ীর, আলগা, জিগাবাড়ি, গাবগাছি, খাটিয়ামারির চরাঞ্চলেও বাদাম চাষ হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, একটা সময় এসব চরাঞ্চলে মিষ্টি আলু ও দু একটি সবজি ছাড়া কিছুই চাষ হতো না। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে উত্তরের উজানের ঢলে নেমে আসা পলিতে বাদাম চাষে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তাই চলাঞ্চলের কৃষকরা ব্যাপকভাবে বাদাম চাষে ঝুকছে।

এছাড়াও এর অল্প সময়ে বাদাম চাষ করে অধিক লাভবান হওয়া যায়। প্রতিবছর বন্যা-পরবর্তী সময়ে জেগে ওঠা পলি মাটির চরে তাঁরা বাদাম চাষ করেন। খরচ বাদ দিয়ে বিঘা প্রতি ১৭ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ হয়। বাদাম খেত থেকে আগাছা কেটে তাঁদের গবাদিপশুকে খাওয়ানো হয়। এ ছাড়া অন্য ফসলের মতো বাদামের জমিতে তেমন একটা সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না। বীজ রোপণের আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যেই বাদাম তুলে সংগ্রহ ও হাট-বাজারে বিক্রি করা যায়।

সদর উপজেলার ইউনিয়নের সিদাই চরের বাদাম চাষী তারা মিয়া বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে বাদাম চাষ করে আসছি। গত বছর ভালো দাম পাওয়ার এবার ৫ বিঘা জমিতে বাদাম লাগাইছি। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এবারও ভালো ফলনের আশা করছেন তিনি

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চর চরিতাবাড়ী গ্রামের কৃষক ময়নাল মিয়া বলেন, নদী ভাঙ্গনে দিশেহারা মানুষ আমরা। ধানের চেয়ে গত কয়েক বছর ধরে বাদামেই বেশি লাভ হচ্ছে। তাই অনেক কষ্ট করে তিন বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছি। ধানে যেরকম কীটনাশক ও ওষুধ প্রয়োগ করতে হয় বাদাম চাষে তেমন একটা ঔষধ ও কীটনাশক প্রয়োগ করা লাগেনা।

ফুলছড়ি উপজেলার অ্যারেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের জিজ্ঞাসাবারী চরের কৃষক রফিক মিয়া জানান, অল্প খরচে বাদাম চাষ করা যায়। অন্য্যান্য ফসলের তুলনায় লাভ দ্বিগুন। প্রতি একরে খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে আয় হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। বাদাম তুলে শুধু রৌদে শুকালাই অনেকদিন রাখা যায়। তাছাড়া বাদাম সারা বছরই বিক্রি করা যায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, গাইবান্ধার চার উপজেলার বিভিন্ন চরে ৭৫ হেক্টর জমিতে এবার বাদামের চাষ হয়েছে। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের মধ্যে বিনা মূল্যে সার ও বাদামের বীজ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। এছাড়া‌ বাদামের ভালো ফলনের জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে বাদাম চাষীদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এ বছর বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন এই কর্মকর্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *