‘হঠাৎ দেখলাম কোমরে একটি গুলি লাগল’,কি হয়েছিল সেদিন।

বিপুল রায়- কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

সেদিন ছিল ২১ জুলাই, সারা দেশে কার্ফু চলছে। আমি ১৭ তারিখ থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলাম। ছাত্র না হয়েও আমি চেয়েছিলাম আমার ভাইরা যেন ন্যায্য অধিকার পায়। আমি আমার দায়বদ্ধতা থেকেই আন্দোলনে গিয়েছিলাম সকাল সাড়ে ৯টার দিকে।

আমি ও আমার কয়েকজন বন্ধু মিলে বাড্ডা থানার শাহজাদপুুর এলাকায় যাই। সেখানে হাজার মানুষ জমা হয়েছিল। হঠাৎ করে দেখি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর দুটি গাড়ি এলো। তারা এসেই এলোপাতাড়ি গুলি করতে লাগল।

আমরা যে যার মতো করে দৌড়ে পালাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম আমার কোমরে একটি গুলি লাগল। আমি আর কিছু বলতে পারি না। এখন আমি ৫৩ দিন ধরে শয্যাশায়ী।
ধার-দেনা করে চলতে হচ্ছে আমাকে, ধার-দেনা মেটাতে বিক্রি করেছি বউয়ের স্বর্ণের চেইনও।’

কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার মুন্সিপাড়া এলাকার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম আরিফ। তিনি পেশায় একজন ইলেকট্রিক শ্রমিক। চুক্তিতে তিনি কাজ করেন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়। পারিবারিক জীবনে আরিফ এক কন্যার পিতা।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে বাম পায়ে বুলেটবিদ্ধ হন তিনি। ১৯ আগস্ট তাঁর পায়ে একটি অপারেশন করা হয়েছে আকিজ গ্রুপ ও ছাত্রদের অর্থিক সহায়তায়।

তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আন্দোলনকারী ছাত্ররা তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করান। যেখানে বর্তমানে তিনি পা হারানোর আশঙ্কা নিয়ে ৫৩ দিন ধরে শয্যাশায়ী। জেলা প্রশাসন ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আরিফকে সহযোগিতা করা হয়েছে। এ ছাড়া আরিফের স্ত্রী স্বামীর এমন দুর্দিনে চিকিৎসার আর্থিক দেনা ও পরিবারের ভরণ-পোষণ সামলাতে নিজের স্বর্ণের চেইন বিক্রি করে সংসার সামলাচ্ছেন।

বিছানায় শুয়ে আরিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দেখে আমি নিজেও সেখানে কয়েক দিন যাই। আমি ১৭, ১৮, ১৯ জুলাই আন্দোলনে যোগদান করি। কিন্তু ২০ জুলাই ঢাকার বাড্ডার শাহজাদপুর এলাকায় মিছিলে বের হলে বিজিবির ছোড়া গুলি আমার বাম পায়ে লেগে হাড় ভেঙে বের হয়ে যায়। তখন আমি সেখানে পড়ে যাই এবং ছাত্ররা পরে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে ২৯ দিন থাকার পর আকিজ গ্রুপের সহায়তায় ১৯ আগস্ট অপারেশন করি। চিকিৎসার খরচ বহন করতে অনেকে হাসপাতালে দুই-এক হাজার টাকা দিয়েছিল।’

আরিফের বড় ভাই আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আরিফের আলাদা কোনো আয়ের উৎস নেই। এখন চিকিৎসার খরচ আল্লাহ যেভাবে চালাবেন সেভাবেই চলবে।’ এ সময় তিনি সবার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *