মানবিকতার আড়ালে নোবিপ্রবিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ পুনর্বাসন

মোঃ আরাফাত হোসেন তানিম

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
নোবিপ্রবি প্রতিনিধি

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে
(নোবিপ্রবি) মানবিকতার আড়ালে বিভিন্নভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ পুনর্বাসিত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।ইতিমধ্যেই, নোবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান শুভ ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে নোবিপ্রবিতে ছাত্রলীগের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।

জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে ৮ আগস্ট রাতে, বন্যা দুর্গতদের সাহায্যে ঢাকা থেকে টিম আসলে সেখানে আব্দুল্লাহ আল মামুন সাব্বিরকেও দেখা যায়। যেখানে শহিদ মীর মুগ্ধের ভাই মীর স্নিগ্ধও ছিলো।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এগুলো নিয়ে তুমুল আলোচনা হলে আব্দুল্লাহ মামুন সাব্বির ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হয়। সাব্বির বিএমএস বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের শিক্ষার্থী এবং আব্দুল মালেক উকিল হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক।পরবর্তীতে গত ৩০ অক্টোবর, নোবিপ্রবির শিক্ষার্থী মোস্তফা তারেক সিয়ামের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সিয়ামের লাশবাহী ফ্রিজিং ভ্যান নিয়ে ক্যাম্পাসে পুনরায় প্রবেশ করে সাব্বির ও তার বন্ধু শাখা ছাত্রলীগের অন্তর্গত আব্দুল মালেক উকিল হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা প্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের শিক্ষার্থী সজীব।

গত ৫ অক্টোবর, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্লাবের সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করা হয় সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী ও বিজিই বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তফা গালিবকে (২০১৯-২০ সেশন)। মোস্তফা গালিব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী ছিল।

গত ৩০ অক্টোবর রাতে ছাত্র বিক্ষোভের সময় নিষিদ্ধ  ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে অভিযুক্ত নোবিপ্রবি আইসিই বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের শিক্ষার্থী আরমান হোসেনকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নেতৃত্ব এবং দাবিদাওয়া পেশ করেছে বলে সামাজিক গণমাধ্যমে অভিযোগ করে পোস্ট করে শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে, ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে আরমান হোসেন।

গত ১১ নভেম্বর (সোমবার) থেকে নোবিপ্রবিতে শুরু হয় আন্তঃবিভাগীয় বার্ষিক ফুটবল টুর্নামেন্ট। যেখানে প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের ভাষা শহিদ আবদুস সালাম হল শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মারোওয়া নুভান (২০১৯-২০ বর্ষ),আব্দুস সালাম হলের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ইলেক্ট্রিকাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের রিদওয়ান বিন আজাদ (২০১৯-২০ বর্ষ), আবদুস সালাম হল শাখার উপ-সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং ওশানোগ্রাফী বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেরাজ ইসলাম তুহিনকে (২০২১-২২ বর্ষ) খেলতে দেখা যায়। পরবর্তীতে সে টুর্নামেন্ট নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর খেলা স্থগিত রাখা হয়।

গত ১৪ নভেম্বর, রাত ৩ টার সময় বিবি খাদিজা হলের ৩০৬ নম্বর রুমে শর্ট সার্কিটের কারণে নিচতলার পেছনের সিঁড়ির পাশে অবস্থিত বৈদ্যুতিক মিটার বক্সে আগুন লাগে। এ ঘটনায় আতঙ্কিত ছাত্রীরা দ্রুত হল থেকে বেরিয়ে আসেন।পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ ইসমাইল হল পরিদর্শন আসলে সেখানে শাখা ছাত্রলীগের অন্তর্গত বিবি খাদিজা হলের সহ-সভাপতি এবং ব্যাবসায় প্রশাসন বিভাগের ইয়াসমিন সুলতানা পপিকে (২০১৮-১৯) সম্মুখ সারিতে দেখা যায়।

এ ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন,নোবিপ্রবির সমন্বয়ক বনী ইয়ামিন বলেন, “৫ই আগস্টের পর সবারই যে কনসার্ন তা হচ্ছে ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন।এখানে এমন কিছু ছাত্র আছে যারা কখনো ছাত্রলীগ করতো না তবে ছাত্রলীগ তাদের চালাতো,তারা এখন নিরপেক্ষ হয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ করছে।আমরা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে এসব বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবো “।

নোবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল এ ব্যাপারে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসনের বিপক্ষে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাসিবাদ এবং ফ্যাসিবাদের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছুই পুনর্বাসন করবো না। প্রশাসনের কাছে এ সকল বিষয়গুলো আসলে যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহন করবে “।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *