মহাদেবপুরে জুয়েলারি ব্যবসার আড়ালে অবৈধ সুদের কারবার

মোঃ সারোয়ার হোসেন অপু
স্টাফ রিপোর্টারঃ

নওগাঁর মহাদেবপুরে জুয়েলারি ব্যবসার আড়ালে চলছে জমজমাট অবৈধ সুদের কারবার। কোন রকম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমত সুদের হার নির্ধারন করে নেয়া হচ্ছে সুদ। সুদের টাকা মাত্র তিন মাস দিতে না পারলে বাজেয়াপ্ত করা হয় লাখ লাখ টাকার বন্ধকী সোনা। এতে গ্রামের অসংখ্য কুলবধূ নিঃস্ব হয়েছেন। দ্বারে দ্বারে ধর্না দিয়েও তারা কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ধরে এই অবৈধ কারবার চলে আসলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে কখনো কোন ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয়নি। ভূক্তভোগীরা এই অবৈধ সুদের ব্যবসায় বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার ও তাদের বাজেয়াপ্ত করা গহনা ফেরতের দাবি জানান। উপজেলার কয়েকজন গৃহবধূ অভিযোগ করেন যে, তারা জরুরী প্রয়োজনের সময় জুয়েলারি দোকানে নিজেদের স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে কিছু টাকা ধার নেন। এরজন্য প্রতি হাজারে প্রতি মাসে ৬০ টাকা করে সুদ দিতে হয়। কিন্তু নানা কারণে অনেকেই সুদের টাকাও যোগাড় করতে পারেন না। এভাবে তিন মাস সুদ না দিলে তাদের লক্ষ লক্ষ টাকা মূল্যের গহনা আর ফেরৎ দেয়া হয়না। এটা নিয়ে তারা বিভিন্ন জনের সহযোগিতা চেয়েও কোন প্রতিকার করতে পারেননি। উপজেলার খাজুর ইউনিয়নের মধুবন গ্রামের জান্নাতুল ফেরদৌস লতা জানান, তিনি উপজেলা সদরের সোনারপট্টি এলাকার কোহিনুর জুয়েলার্সে দুই ভরি সাড়ে তের আনা ওজনের স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে ৬০ হাজার টাকা নেন। এজন্য মাসে তিন হাজার ৬০০ টাকা সুদ দেন। পরে সুদের টাকা দিতে না পারায় দোকান মালিক সে সোনা আর ফেরৎ দেননি। তার বন্ধক রাখা সোনার দামের চার ভাগের একভাগ টাকা ঋত নিয়েছেন তিনি। কিন্তু এখন সুদের টাকা দিতে না পারায় পুরো সোনা নিয়ে নিচ্ছে। বন্ধক রাখা জুয়েলার্সের মালিক বলেছেন নিয়মানুযায়ী বন্ধকের মেয়াদ পার হওয়ায় বন্ধক রাখা সোনা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। দামি সোনাগুলো ফেরৎ পাবার জন্য তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনের মাধ্যমে দেন দরবার করেছেন। কিন্তু তাকে তার সোনা ফেরৎ দেয়া হয়নি। হাসিনা খাতুন নামে আর এক গৃহবধূ অভিযোগ করেছেন যে, তিনি আরাফাত জুয়েলার্সে তার সোনার গহনা বন্ধক রাখেন। কিন্তু দোকান মালিক সিরাজুল ইসলাম সে গহনা ফেরৎ না দেয়ার উদ্দেশ্যে সে ভেঙে ফেলেন। জানতে চাইলে কোহিনুর জুয়েলার্সের মালিক এবং উপজেলা জুয়েলারি মালিক সমিতির সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক জানান, জান্নাতুল ফেরদৌস লতার বিষয়টি পাঁচ বছর আগেকার। কিন্তু তার ঋণের মেয়াদ ছিল মাত্র তিন মাস। মাসে পাঁচ শতাংশ হারে সুদ নেয়া হয়। এতে এখন তার শুধু সুদের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। আর আসল ৬০ হাজার টাকা। মোট পাওনা দুই লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। আর তার বন্ধক রাখা সোনার মোট দাম এখন এক লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। তার সোনার দামের চেয়ে পাওনা অনেক বেশি। ভাই ফেরৎ দেয়া হয়নি। সুদাসলের মোট টাকা পরিশোধ করলে তবেই তার সোনা ফেরৎ পাবেন। আতিক জানান, স্মরণাতীত কাল থেকে এই সুদের কারবার চলে আসছে। সোনার দোকান মানেই এরকম সুদের ব্যবসায়। তার সমিতির একশ’ জন সদস্য রয়েছে এবং এদের অনেকেই এই সুদের ব্যবসায় করেন। এজন্য তারা নিয়মানুযায়ী সমবায় দপ্তর থেকে কোন লাইসেন্স নেননি বলেও জানান তিনি। বিষয়টি বেআইনী জেনেও বছরের পর বছর ধরে তারা এই ব্যবসায় করে আসছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *