পলাশবাড়ীতে ভাই বোন কে ৬০ লাখ টাকার চেক স্ট্যাম্প দিয়ে তিনদিন পর লাশ দাফন

 

পলাশবাড়ী প্রতিনিধি,মোঃ রাসেল মাহামুদ

নিজের অর্জিত সম্পদ বিক্রির টাকার ভাগ না দেওয়ায় মৃত্যুর তিনদিন পর পর্যন্ত গণপূর্ত বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত উপ সহকারি মোতাহার মুন্সির মরদেহ জিম্মি করে রেখে ৬০ লাখ টাকার চেক স্ট্যাম্প নিলো আপন ছোট ভাই নজরুল ইসলাম মুন্সি,বোন রাবেয়া বেগম ও লতিফা বেগম গং। গণপূর্ত বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত উপ সহকারি মোতাহার মুন্সির মরদেহ জিম্মি করে স্ত্রী মাসুমা বেগম এর কাছে থেকে ইসলামী ব্যাংকের ৬০ লাখ টাকার চেক ও স্ট্যাম্প করে নিয়ে আপোষ মিমাংসা করে। এরপরও মরদেহ দাফনে কাল ক্ষেপন করায় ২২ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার রাত দশটায় গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তা,ইউপি সদস্যগণ,স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিবর্গের ও পলাশবাড়ী থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে সাকোয়া গ্রামে পারিবারিক কবর স্থানে মোতাহার মুন্সির মরদেহ দাফন করা হয়। এঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা সৃষ্টি করেছে।

জানা যায়, পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের সাকোয়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত সামসুল হক মুন্সির দ্বিতীয় পুত্র মোতাহার মুন্সি (৭০) ঢাকায় গণপূর্ত বিভাগের উপ সহকারি হিসাবে বেশ কয়েক বছর আগে অবসর গ্রহন করে ঢাকা কলাবাগান এলাকায় স্ত্রী মাসুমা বেগম ও পালিত কন্যা মারজিয়া খাতুন নিয়ে বসবাস করতো। মোতাহার মুন্সি এ্যাজমা রোগে আক্রান্ত ছিলো মৃত্যুর কিছু দিন আগে তিনি ঢাকায় একটি ৫৯ শতাংশ জমি দুই কোটি ১৮ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। গত মঙ্গলবার ভোরে ঢাকায় আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে মোতাহার মুন্সি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে। এ দিন বিকালে স্ত্রী মাসুমা বেগম,পালিত কন্যা মারজিয়া,মাসুমা বেগমের বড় ভাই নুরুল ইসলাম কাজী ও তার স্ত্রী মোতাহার মুন্সির মরদেহ সাকোয়া গ্রামে নিজ বাড়ীতে নিয়ে আসে।এরপর মরদেহ দাফনের কাজে বাধা প্রদান করে মোতাহার মুন্সি ছোট ভাই নজরুল ইসলাম মুন্সি,বোন রাবেয়া বেগম ও লতিফা বেগম গং এর লোকজন। পরে এক প্রকার মরদেহ জিম্মি করে ও দাফন কাজ করতে না দিয়ে জমি বিক্রির টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দরকষা কষি শেষে ৬০ লাখ টাকার ইসলামী ব্যাংকের চেক ও স্ট্যাম্প দিয়ে মোতাহার মুন্সির ভাই বোনের সাথে আপোষ মিমাংসা করে মরদেহ দাফন করা হয়।

মোতাহার মুন্সির স্ত্রী মাসুমা বেগম বা পালিতকন্যা মারজিয়ার কে মরদেহ দাফনের পর পর ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়ায় তাদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি তবে মোতাহার মুন্সির বোন, বোন জামাই ও ভাতিজারা জানায় , মোতাহার মুন্সি অসুস্থ্য থাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্বাভাবিক মৃত্যু হয় ,তাদের কোন অভিযোগ বা আপত্তি নেই।

এ বিষয়ে বেতকাপা ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তা জানান, এমন একটি ঘটনা জানতে পেরে মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করার জন্য এগিয়ে আসেন তিনি ৬০ লাখ টাকা চেক ও স্ট্যাম্প নিয়ে ভাই বোনদের মধ্যে আপোষ মিমাংসার বিষয়টি শুনেছেন বলে জানান। এ বিষয়ে পলাশবাড়ী থানা অফিসার ইনচার্জ আরজু মোঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান,মোতাহার মুন্সির চিকিৎসাধিন অবস্থায় স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এঘটনায় কোন পক্ষ থানায় কোন অভিযোগ না করায় মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।

উল্লেখ্য, অবসরপ্রাপ্ত গণপূর্ত কর্মকর্তা মোতাহার মুন্সি ও মাসুমা বেগম দম্পতি নিঃসন্তান হওয়ায় তাদের নিজের কোন সন্তান ছিলো না। তবে একটি পালিত কন্যা আছে যার নাম মারজিয়া খাতুন। মোতাহার মুন্সি নিজের সন্তান না থাকায় তাহার সম্পদের অংশিদার হিসাবে অপর দুই ভাই, তিন বোন এর পরিবারের সদস্যরা মোতাহার মুন্সির স্ত্রীর নিকট এ চেক ও স্ট্যাম্প গ্রহন করে মোতাহার মুন্সির মরদেহ দাফন করলো ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *