নওগাঁর বদলগাছীতে গভীর-অগভীর নলকূপের ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক, চিন্তায় কৃষকেরা!

জেলা প্রতিনিধি নওগাঁঃ নওগাঁর বদলগাছী উপজেলাতে গভীর-অগভীর নলকূপের ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক পড়েছে। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দ্বায়ীত্বে অবহেলায় এই চুরি সংগঠিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন কৃষকরা। ট্রান্সফরমার চুরি হলে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের কাছেই অভিযোগ করা হয় এবং তারাই এর সমাধান করেন।বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ এ ব‍্যপারে থানায় তেমন জানান না এবং তেমন অভিযোগও হয় না।

চুরি হওয়া বেশির ভাগ ট্রান্সফরমারই কৃষকদের জমিতে সেচের কাজে ব্যবহার করা হয়। তাই ক্ষতির বোঝা পড়ে তাঁদের ঘাড়েই।
পবিসের নিয়মানুযায়ী, প্রথমবার চুরি হওয়া ট্রান্সফরমারের জায়গায় নতুন ট্রান্সফরমার পুনরায় স্থাপন করতে গ্রাহককে অর্ধেক মূল্য পরিশোধ করতে হয়। এরপর চুরি হলে ট্রান্সফরমারের পুরো মূল্যই দিতে হয় গ্রাহককে। চুরির কারণে বারবার ট্রান্সফরমার কিনতে গিয়ে কৃষকেরা লোকসানে পড়েন, যা কাটিয়ে উঠতে পারেন না অনেকে।ট্রান্সফরমার চুরির কারণে আর্থিক ক্ষতি তো হয়ই, নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ফসল উৎপাদনেও। সেচে ঘাটতি দেখা দেয় এর ফলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় না।
বাজারে চাহিদা এবং মুল্য ভালো থাকায় প্রতি বছর ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে গভীর নলকূপের অপারেটর সহ কৃষকরা।চুরি যাওয়া ৩৪ টি ট্রান্সফরমারের গড়মুল্য প্রায় ২১ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা।

রোপা আমন ধান কৃষক ঘরে তোলার পর মাঠ ফাঁকা হয়ে যাওয়ায়, শীতের কুয়াশাছন্ন অন্ধকার রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে সেই সময় বৈদ্যতিক লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ট‍্রান্সফরমার থেকে খুলে নেওয়া হয় মুল্যবান তামার তার এবং কয়েল। আবার বেশিরভাগ পুরো ট্রান্সফরমারই চুরি করে নিয়ে যায়।
এক একেক টি ট্রান্সফরমার ৫ ও ১০ কেভি বিদ্যুৎ ধারন ক্ষমতা সম্পুর্ণ এবং প্রতিটি ট্রান্সফরমারে ৯ কেজি থেকে ১৬ কেজি পর্যন্ত তামার তার থাকে।
প্রতি কেজি তামার মুল্য কমপক্ষে ১২০০ টাকা। ৫ কেভি ট্রান্সফরমারের মুল্য ৪৫০০০ হাজার টাকা এবং ১০ কেভি ট্রান্সফরমার মুল্য ৬৮০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা বলেন, বোরো চাষের মৌসুমে এভাবে সেচ পাম্প ও ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ায় সেচের কাজ ব্যাহত হয়। ফসল বাঁচাতে দ্রুত এসব ট্রান্সফরমার ও সেচ পাম্প কিনতে গিয়ে বেশি টাকা ব্যয় হয়। এতে কৃষকদের ভোগান্তির পাশাপাশি চাষাবাদ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে সহযোগিতা না পাওয়ার ফলে চলতি ইরি মৌসুমের আগে নতুন ট্রান্সফরমার কিনে সেচ নিয়ে চিন্তাই পড়েছে কৃষকেরা। তবে কেউ কেউ বলছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর নজরদারির অভাবে চুরি হচ্ছে ট্রান্সফরমার।

দরিয়াপুর গ্রামের বাসিন্দা আয়নাল বলেন, কয়েক মাস আগে এলাকা থেকে ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছিল। এতে মাঠে সেচ দিতে কৃষকদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বেশ কিছুদিন পরে নতুন ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হয়। তত দিনে সেচ সরবরাহ বন্ধ থাকায় ফসলের উৎপাদন ভালো হয়নি।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের কৃষক রশিদ,রফিকুল,রনজুসহ ১০/১২ জন কৃষক বলেন, গভীর নলকূপের বেশীর ভাগ জায়গায় সমবায় সমিতি না থাকায় অপারেটর একা নিয়ন্ত্রন করে। আবার কেউ কেউ ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। ফলে অপারেটর বা কোন পাহারাদার না থাকার কারনে ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ার মূল কারন বলছে তারা। আর ট্রান্সফরমার চুরির অজুহাত দিয়ে সাধারন কৃষকের পকেট কাটছে
কিছু অসাধু অপারেটর। তবে এসব বিষয়ে বরেন্দ্র অফিসে অভিযোগ দিয়েও কোন কাজ হয় নি, এমনটিই বলছে সাধারন কৃষকরা।

তবে বেগুনজোয়ার গ্রামের অপারেটর জনি,পারিচা গ্রামের শামিম এবং তেজাপাড়া গ্রামের সুলতান আহম্মেদ বলেন,রাতে চুরি হলে সকালে বরেন্দ্র অফিস এবং থানায় লিখিত অভিযোগ দিছি। বরেন্দ্র অফিসের জাহাঙ্গীর স্যার বলল ,আমাদের
কিছু করার নেই। নতুন ট্রান্সফরমার কিনে নিন। আর পুরাতন ট্রান্সফরমার আমি সন্ধান পাইলে কম দামে কিনতে পারবেন। আমি আপনাদের মোবাইলে জানাবো।
সচেতন মহল মনে করেন, বরন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চাইলে ট্রান্সফরমার চুরি রোধ করতে পারে। অপারেটর মাধ্যমে কৃষকদের সাথে কথা বলে এবং থানা পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে এসব রোধ করা সম্ভব।

বদলগাছী বিএমডিএ’র উপ সহকারী প্রকৌশলী মো জাহাঙ্গীর আলমের কাছে পুরাতন ট্রান্সফরমার সন্ধান বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,এক চাউল মিল মালিক বিক্রি করতে চেয়েছিলো। তাই আমি ঐ অপারেটর কে বলেছি।প্রয়োজনের বেশী তো কেউ ট্রান্সফরমার রাখতে পারে না। তাহলে মিল মালিক বিক্রি করবে কিভাবে? জবাবে তিনি বলেন, সে ব্যবসা ক্লোজ করবে। এই জন্য সে
ট্রান্সফরমার বিক্রয় করতে চায়। আপনি বিষয়টি অন্য দিকে নিয়ে যাচ্ছেন কেন?

এ বিষয়ে বদলগাছী পল্লী বিদ্যুত সমিতির ডিজিএম আহসান হাবিব বলেন, ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। ট্রান্সফরমার চুরি রোধে গভীর-অগভীর মালিকদের নিজ উদ্যোগে ট্রান্সফরমার পাহারার ব্যবস্থা করতে মাইকিং করে বলা
হয়েছে।

বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো মাহবুবুর রহমান বলেন, একটি অভিযোগ পেয়েছি। কৃষকরা আমন ধান ঘরে তোলার পর অনেক মাঠ ফাঁকা হয়ে গেছে। শীতের রাত হওয়ার সুযোগে
চোরেরা এই সময়টাকে কাজে লাগাচ্ছ তবে চোর চক্রকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *