সুবাস চন্দ্র ,জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ:
নওগাঁর বদলগাছীতে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। দিন-রাতে অর্ধেকের কম সময় ধরে থাকছে বিদ্যুৎ।
গ্রাহকরা বলছেন, অসহনীয় লোডশেডিংয়ে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। বদলগাছী সদরে বিদ্যুৎ একটু ভালো থাকলেও গ্রামে ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং। ফলে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন উপজেলার মানুষ।গত কয়েকদিন যাবত সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় ৫-৬ বার লোডশেডিং হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত এক সপ্তাহ থেকে উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়েছে। শহরে কম লোডশেডিং হলেও গ্রামাঞ্চলে ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে। দীর্ঘ সময় থাকছে না বিদ্যুৎ। অব্যাহত লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। গ্রামে ১৮-২০ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানা গেছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
বদলগাছী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে,বদলগাছী জোনাল অফিসের আওতায় উপজেলাজুড়ে পল্লী বিদ্যুতের প্রায় ৫৯ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। উপজেলা সদর এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের একটি সব-স্টেশন। গ্রাহকদের মধ্যে বিদ্যুৎ
সরবরাহের জন্য ৭ টি ফিডারে বিভক্ত করা হয়েছে। আর এসব ফিডারের মাধ্যমে সব গ্রাহকদের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। উপজেলায় প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে ১৩-১৪ মেগাওয়াট। তবে এর মধ্যে বর্তমানে সরবরাহ হচ্ছে ৫-৭
মেগাওয়াট। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অর্ধেক।
সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে গ্রামাঞ্চলে। গ্রামাঞ্চলের গ্রাহকদের অভিযোগ,
দিনরাতে ১৮-২০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। তবে উপজেলা সদরে লোডশেডিং কিছুটা কম হলেও কয়েকদিন যাবত লোডশেডিং বেশী। বিশেষ করে রাতের বেলায় কোনও বিদ্যুৎ
থাকে না বললেই চলে। ফলে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
উপজেলার তেজাপাড়া গ্রামের বেলাল হোসেন. মোঃ আক্কাস আলীসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, গ্রামে একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে আসার কোনো সময় থাকে না। দুই-আড়াই ঘণ্টা পর এলেও কিছু সময় পর আবার চলে যায়।আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে চরম বৈষম্য হচ্ছে। সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা যেখানে বসবাস
করেন তাদের এলাকায় বিদ্যুৎ বেশি থাকে। অন্য জায়গাগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা
লোডশেডিং হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় মাত্র চার ঘণ্টার মতো বিদ্যুৎ থাকে। একবার বিদ্যুৎ গেলে তিন-চার ঘণ্টার আগে দেখাই মেলে না।
পল্লী বিদ্যুৎ সূত্র বলছে, উপজেলা সদরে হাসপাতাল, ব্যাংক, অফিস-আদালতসহ
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থাকায় সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ জরুরি।
উপজেলা সদর ইউনিয়নের বদলগাছী গ্রামের শহীদুল ইসলাম বলেন, ভ্যাবসা গরমে
বিদ্যুৎ না থাকায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জীবন। মধ্য রাতে কেন লোডশেডিং? রাত ১২টায় ঘুমাতে গেলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। এক ঘণ্টা পর আসে। ঘুম কিছুটা গভীর হওয়ার আগে দুইটার দিকে আবার বিদ্যুৎ চলে যায়। এরপর আধা ঘণ্টাও বিদ্যুৎ
থাকে না। কয়েকদিন ধরে এমন অবস্থা চলছে। ঘুমাতে পারছে না কেউ। বাচ্চাদের সকালে স্কুলে যেতে কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে বয়স্ক লোক আর বাচ্চাদের অবস্থা খুবই খারাপ।
আধাইপুর ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামের আশরাফুল ইসলাম বলেন, ঘনঘন বিদ্যুৎ যাওয়ার কারণে গরমে অস্থির হয়ে গেলাম। আমিসহ ঘরে একাধিক অসুস্থ রোগী। বাচ্চাদের ঠিকমতো ঘুম ও পড়াশোনা হচ্ছে না। খুবই কষ্ট হচ্ছে।
চাকরাইল গ্রামের রুবেল, রফিকুল ভাতশাইল গ্রামের অখিল, নিখিল বলেন, বিদ্যুতের যে অবস্থা দিন-রাত মিলে ৪-৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে। ২৪ ঘণ্টার
মধ্যে গড়ে প্রায় ১৮-১৯ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুৎ গেলে দেড়/দুই ঘন্টার আগে আসে না। দেড়/দুই ঘন্টা পর এসে ২০ মিনিট/আধাঘন্টা থেকে আবার
চলে যায়। বিদ্যুতের জ্বালায় কয়েকদিন ধরে রাতে ঘুমানো যায় না। বিদ্যুতের লোডশেডিং হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ বিল কমার কথা কিন্তু মাসে বিদ্যুৎ বিল তো কমেনা আরও বাড়ে।
উপজেলার কোলা ইউনিয়নের একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, সারা দিনে কতবার
বিদ্যুৎ যায়, তার হিসাব নেই। গত তিন সপ্তাহ ধরে শুধু রাতেই ৭-৮ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। গরমের কারণে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। মধ্য রাতে কেন দীর্ঘ লোডশেডিং বিষয়টি বোধগম্য নয়।
এ বিষয়ে নওগাঁর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বদলগাছীর উপ-মহাব্যবস্থাপক মোঃ আহসান
হাবীব বলেন, উপজেলায় প্রায় ৫৯ হাজার গ্রাহকের বিপরীতে প্রতিদিন চাহিদা ১৩-১৪ মেগাওয়াট সেখানে সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে ৫-৭ মেগাওয়াট। চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ সরবরাহ হওয়ায় ঘন ঘন লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।দিনের তুলনায় রাতে কেন দীর্ঘ লোডশেডিং এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ এমন একটি
জিনিষ যা সঞ্চয় করে রাখার কোন যন্ত্র এখনও আবিস্কার হয়নি। তাই যখন যেভাবে
উৎপাদন হয় তখন সেভাবেই সরবরাহ দেওয়া হয়। এই অবস্থা কতদিন চলবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাপমাত্রা কমলে লোডশেডিং কিছুটা কমে যাবে। এর বাহিরে কিছু করা সম্ভব নয়।