বিপুল রায় -কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামে মাদক পাচারে অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার করছে মাদক কারবারীরা। আইন শৃংখলা বাহিনী যতই তৎপর হচ্ছে, মাদক কারবারীরা ততই বেপরোয়া হয়ে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে পাচার করছে সমাজ বিধ্বংসী এসব মাদক। কোনভাবেই তাদেরকে আটকানো যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে বড় বড় চালান ধরা পরায় পাচারের কৌশল দেখে হতবাক সংশ্লিষ্টরা।পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, গত বছরের নভেম্বর হতে চলতি বছরের ১৩নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি ৬৫ লাখ ৫ হাজার টাকার মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ৪৬০টি। গ্রেফতার হয়েছে ৬৩০জন। সীমান্ত দিয়ে বেশিরভাগ সময় গাজা, ইয়াবা, হেরোইন, বিদেশী মদ ও ফেন্সিডিল ধরা পরছে।
সম্প্রতি লক্ষ্য করা গেছে, বেপরোয়া মাদক কারবারীরা আইন শৃংখলা বাহিনীকে ধোঁকা দিতে বিভিন্ন অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার করে মাদক পাচার করছে। তারা এ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে লাশ সাজিয়ে গাঁজা ও ফেনসিডিল, চলন্ত ট্রাকের চাকার ভেতরে গাঁজা ও ফেনসিডিল, সুয়ারেজ পাইপের মধ্যে বিদেশী মদ, মটরসাইকেলের হেডলাইট ও বসার সীটের নিচে এবং তেলের ট্যাংকের ভেতর, ডিম রপ্তানী পিকআপ গাড়িতে গাঁজা এবং ট্রলি পাটাতনের নিচে বিশেষ কায়দায় মাদকদ্রব্য বহনের সময় পুলিশের হাতে আটক হয়। পুলিশ তাদের এই অভিনব কায়দায় মাদক পাচার করতে দেখে অবাক।
দিন যতই যাচ্ছে কুড়িগ্রাম থেকে সারাদেশে মাদক পাচারে মাদক কারবারীরা আরও নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। চোরাচালান কিংবা অনুপ্রবেশ রোধে বিএসএফ’র কঠোর ভূমিকা থাকলেও মাদক পাচার রোধে তেমন কোন ভূমিকা নেই। এতে করে মাদক রোধে বাংলাদেশের বিজিবি ও পুলিশ বাহিনীকে বেগ পেতে হচ্ছে। অবাধে সীমান্ত বেয়ে জেলায় মাদক সয়লাব হয়ে পড়ায় উদ্বিঘ্ন সাধারণ মানুষ। এখন হাত বাড়ালেই হেরোইন, ইয়াবা, মদ, গাঁজাসহ সবধরণের মাদক পাওয়া যাচ্ছে জেলা জুড়ে। সীমান্ত এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য মাদক কেনা বেচার স্পট। আইনশৃংখলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে প্রকাশ্যেই চলছে মাদক কেনাবেচা। আর এসব মাদক কারবারীদের অনেকেই স্থানীয় রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় মাদক কেনাবেচার কারণে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। ফলে দিন দিন বাড়ছে মাদক সেবীদের সংখ্যা। এতে করে মাদক সেবনে ধ্বংস হচ্ছে যুব সমাজ, পরিবহন শ্রমিক, ব্যবসায়ী এমনকি স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও।
জেলায় ১৬টি নদ-নদী দিয়ে বেষ্টিত ৯টি উপজেলার মধ্যে ৭টি উপজেলায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং মেঘালয় এই তিন রাজ্যের সীমান্ত রয়েছে প্রায় ৩শ কিলোমিটার সীমান্তপথ। এরমধ্যে প্রায় নদী পথসহ সমতলে প্রায় ৫০কিলোমিটার সীমান্তে কাটাতার নেই। জেলার আইনশৃংখলা বাহিনীকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে মাদক নির্মূলে চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হচ্ছে।
ফুলবাড়ি উপজেলার গোড়কমন্ডপ এলাকার বাসিন্দা মজিবর রহমান জানান, ভারতীয় বিএসএফ মাদক প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করলে সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার অনেক কমে আসতো।
একই এলাকার বদরুল আলম জানান, যত মাদক ধরা পরে শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। এখানে পুলিশ-বিজিবি মাদক ধরলেও বিএসএফ মাদক নিয়ে ততটা সিরিয়াস নয়। ফলে এই এলাকায় মাদক পাচার দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।
সোনাহাট স্থলবন্দরের আমদানী-রপ্তানীকারক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক জানান, মাদক নির্মুলে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহন করা দরকার। এছাড়াও জেলার সরকারি কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিদের ডোপ টেষ্টে আনার দাবী জানান তিনি।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানান, মাদক পাচারে জেলার মাদক ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কুট কৌশল অবলম্বন করলেও স্মার্ট পুলিশিংয়ের কারণে তারা রেহাই পাচ্ছে না। মাদকের জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে জেলা জুড়ে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে বলে জানান তিনি।