মেহেরপুর জেলা (সদর) প্রতিনিধি:
মো:আসাদুজ্জামান খান-
বাঁশশিল্প মূলত একটি লোকশিল্প, এর প্রধান মাধ্যম বাঁশ। বাংলাদেশে এই তৃণ গোত্রের প্রায় ২৬ ধরণের বাঁশ পাওয়া যায়। সাধারণত গ্রামের মানুষেরা এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। বাঁশের ব্যবহার, মাচা, ঘর, মই, ঝুড়ি, ফাদি, হস্তশিল্প ইত্যাদি ছাড়াও, মৃতদেহ সৎকার ও দাফনের কাজেও বাঁশের ব্যবহার হয়।
বাঁশশিল্প বাঙালী সংস্কৃতির একটি বড় অংশ। বাঁশ দিয়ে ঘরের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করা হতো। আর এসব জিনিস পত্রের কদরও ছিল বেশ ভালো। অপ্রতুলতা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাবে, প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে মেহেরপুরের বাঁশশিল্প। বর্তমান বাজারে প্লাস্টিকের পণ্য সামগ্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে না পেরে, মুখ থুবড়ে পড়ছে বা পড়েছে এককালের ঐতিহ্যবাহী বাংলার এই শিল্প। অপরদিকে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে অভাব-অনটণের মধ্যে দিন যাপন করছেন, বাঁশ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকতে, মানবেতর দিন কাটছে তাঁদের। শ্রী মাধব চন্দ্র দাস (৫৫), শ্রী বাবুল চন্দ্র দাস (৫২), শ্রী কুমার দাস (৫০), শ্রী লক্ষ্মণ চন্দ্র দাস (৫০) তাঁদের সাথে কথপোকথনের সময় জানা যায়, ১ টি বাঁশে ১২-১৩ টি ডালা তৈরি হয়, যা বিক্রয় করে খরচ বাদে ১৫-২০ টাকা লাভ হয়। আর্থিক সহয়তার বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে বলে, অনেক প্রতিষ্ঠানই আশ্বাস দেয় কিন্তু কাজের বেলায় কাঁচকলা। অপরদিকে মেহেরপুর বিসিকের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, ফয়সাল হাসনাত বলেন বিসিক, বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের পরামর্শ, প্রশিক্ষণসহ আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে।
প্রকৃতপক্ষে বাঁশ বা বেতের সামগ্রী যারা তৈরি করছে, তাদের সরকার এবং বিভিন্ন এনজিওর সহায়তা করা অত্যান্ত জরুরি। বাংলার ঐতিহ্য বাঁশ ও বেতের সামগ্রীকে টিকিয়ে রাখতে হলে, এর পেছনের মানুষগুলোকে আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের পেশাকে বাঁচাতে হবে। প্রয়োজন হলে এদের জন্য বিনা সুদে, ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় বাঁশশিল্প বা হস্তশিল্প একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এই শিল্পকে বাঁচতে আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিৎ।
নতুবা একদিন আমরা আমাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে হারিয়ে, অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বো। তখন নিঃসঙ্গতায় হবে আমাদের একমাত্র সঙ্গী।