মোঃ সারোয়ার হোসেন অপু
স্টাফ রিপোর্টারঃ
নওগাঁর মহাদেবপুরে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষরা প্রতিবছর ফসল বিনষ্ট করছে। বিস্তর টাকা খরচ করে ধান লাগিয়ে ধান পাকার পূর্ব মূহুর্তে নষ্ট করছে। এতে একদিকে যেমন ওই চাষি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি ফলন্ত ধান নষ্ট হওয়ায় জাতীয় ক্ষতি হচ্ছে। এর প্রতিকার পেতে ওই চাষি দ্বারে দ্বারে ধর্না দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিপক্ষরা ধান নষ্ট করছে এমন প্রমাণ পেলেও এর প্রতিকার করছেন না কেউ। যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই তারা হয়রানীর শিকার হচ্ছেন।
গত রোববার (২২ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার রাইগাঁ ইউনিয়নের ছোট মহেশপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিপক্ষরা আগাছানাশক বিষ প্রয়োগ করে সোয়া বিঘা জমির ফলন্ত ধান পুড়ে দিয়েছে। ওই জমির মালিক ওইগ্রামের মৃত আফতাব উদ্দিনের ছেলে মিজানুর রহমান মুকুল তার জমির পুড়ে যাওয়া ধানখেতে আহাজারী করছেন। তিনি জানালেন, আগের দিন শনিবার তিনি দেখতে পান যে, তার জমির ধান গাছগুলো মরে মরে যাচ্ছে। ধানগাছগুলো পুড়ে যাবার ধরণ দেখে তিনি ধারণা করছেন যে, কোন শক্তিশালী আগাছানাশক স্প্রে করা হয়েছে এই জমিতে। এতে তার ৬০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ভুক্তভোগী চাষি জানালেন, ওইগ্রামের আমজাদ হোসেন ও তার ছেলে মিলন হোসেনের সাথে তার এই দাগে ৮২ শতক জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এরই জের ধরে প্রতিবছর তারা ওই জমির ধান নষ্ট করে। এনিয়ে তিনি বিভিন্ন মহলে ধর্না দিয়ে যাচ্ছেন। গতবছর রাইগাঁ ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম আদালতে এ বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাক্ষ্য প্রমাণে প্রতিপক্ষরা ধান বিনষ্ট করার কথা স্বীকার করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। গ্রাম আদালতে দায়ের করা মামলার গতবছর ১৩ সেপ্টেম্বর দেয়া আদেশে উল্লেখ করা হয় যে, ‘প্রতিবাদী আগে দুইবার ফসল নষ্ট করেছে বলে স্বীকার করেছে। অনুমান করা হচ্ছে যে, এবারও তারা ধান নষ্ট করেছে। মনোনীত সদস্যদের বক্তব্য মতে জমির বিষয়টি একটু জটিল এবং জমি সংক্রান্ত বিষয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। তাই উচ্চ আদালত বা আইনজীবির পরামর্শ নিয়ে আপস করতে বলা হলো। মামলাটি খারিজ করা হলো।’ ধান বিনষ্টের অভিযোগ প্রমাণ হলেও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কেন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি জানতে চাইলে মোবাইলফোনে রাইগাঁ ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আরিফুর রহমান আরিফ জানান, প্রতিবাদীরা কথা শোনে না। তাই উচ্চ আদালতে যেতে বলা হয়েছে।
মামলা সূত্রে প্রকাশ প্রতিপক্ষরা ১৯৯০ সালে নওগাঁর দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারি জজ আদালতে একটি বাটোয়ারা মামলা দায়ের করলে ১৯৯১ সালে ডিক্রি হয়। পক্ষগণকে আপসে ছাহাম বন্টন করে নিতে বলা হয়। অন্যথায় কোর্টযোগে দখল নিতে পারবেন। কিন্তু এ পর্যন্ত কেউ কোর্টযোগে দখল চাননি। জানতে চাইলে প্রতিপক্ষ মিলন হোসেন মোবাইলফোনে জানান, দুমাস আগে কোর্টযোগে তাকে জমির দখল বুঝে দেয়া হয়েছে। কিন্তু নওগাঁ জেলা জজ আদালতের নেজারত বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই জমির দখল কেউ বুঝে চাননি।
ধান পুড়ে দেয়ার অভিযোগে রোববার সন্ধ্যায় ভূক্তভোগী চাষী মিজানুর রহমান মুকুলের স্ত্রী হেলেনা বেগম মহাদেবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করতে গেলে থানা পুলিশ তাকে এব্যাপারে কোর্টে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেন বলে জানান। জানতে চাইলে মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাফফর হোসেন জানান, এই জমি নিয়ে একের পর এক মামলা হচ্ছে। কিছুদিন আগে মারামারিতে উভয়পক্ষ আহত হন। উভয়পক্ষের মামলা নেয়া হয়। উভয় মামলায়ই চার্জশীট দেয়া হয়েছে। তাই এর স্থায়ী সমাধানের জন্য আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।