বিপুল রায়- কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
পাট নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন কুড়িগ্রামের চাষিরা। বাজারে পাটের ন্যাযমূল্য না পাওয়ায় পাইকারদের খপ্পরে পড়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। পাট বিক্রি করে উৎপাদন খরচও উঠছে না। জেলার হাট-বাজারগুলোতে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১৮০০-২০০০ টাকা টাকা পর্যন্ত। জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও দাম নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন চাষিরা। হেক্টর প্রতি উৎপাদন ব্যয়ের থেকে বিক্রি হচ্ছে কম দামে। এতে করে লোকসানের মুখে পড়েছেন পাট চাষিরা। চলতি মৌসুমে কুড়িগ্রাম জেলায় ১৭ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এবার পুরো লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। হেক্টর প্রতি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২.৫২ মেট্রিক টন।
কুড়িগ্রাম সদরের সবচেয়ে বড় পাটের হাট যাত্রাপুর। এখানে সপ্তাহে দুইদিন হাট বসে। প্রতি হাটে প্রায় ৩ হাজার মণ পাট কেনাবেচা হয়। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চাষিরা তাদের উৎপাদিত পাট বিক্রি করতে নিয়ে আসেন এখানে। সরকারি-বেসরকারি ক্রয় কেন্দ্রে সরাসরি পাট বিক্রির কোনো সুযোগ না থাকায় কৃষকরা পাইকারদের খপ্পরে পড়ে কম দামে পাট বিক্রি করছেন। সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া এলাকার কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, পাটের বাজার দেখতে হাটে আসছি। পাটের দাম অনেক কম তো তাই আমার পাট এখনই বিক্রি করছি না। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ পাট ১৮০০-২০০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এই দামে পাট বিক্রি করলে লোকসান হবে। পাটের দাম বাড়লে বিক্রি করবো। ১ বিঘা জমি আবাদ করতে সব মিলিয়ে প্রায় ৯-১০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক বিঘা জমিতে পাট হয় ৭-৮ মণ। এতো দাম কম হলে তো আর পাট চাষ করা যাবে না। প্রয়োজনে অন্য কিছু আবাদ করব।
নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের মাঝের চর থেকে যাত্রাপুর হাটে পাট বিক্রি করতে এসেছেন কৃষক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫ বিঘা জমিতে ৩৫ মণ পাট পেয়েছি। এই মৌসুমের শুরুতে প্রতিমণ পাট ২৮০০ টাকায় ২০ মণ বিক্রি করেছি। দাম বৃদ্ধির আশায় বাকি পাটগুলো রেখে দিয়েছিলাম। এখন বাকি পাটগুলো ১৮০০-২০০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রতি মণ পাটে নৌকা ভাড়া ১০ টাকা, হাটের খাজনা প্রতি মণ পাটে ৫০ টাকা করে দেওয়ার পর উৎপাদন খরচ বিবেচনায় লোকসানের হিসাব গুনছেন তিনি।
একই উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের তালপট্টি এলাকা থেকে কৃষকদের কাছে ১৬ মণ পাট কিনে যাত্রাপুর হাটে বিক্রি করতে এসেছেন স্থানীয় পাইকার রহিম মিয়া। তিনি বলেন, আমি ২১০০-২২০০ টাকা দরে প্রতি মণ পাট কিনছিলাম। আজকে সেই কেনা দামেই বিক্রি করতে হলো। পরিবহন খরচ, কুলি খরচ, হাটের খাজনা হিসেব করলে লাভ থাকছে না।
যাত্রাপুর হাটের পাটের পাইকার এরশাদুল হক বলেন, প্রতিমণ পাট ১৮০০-২০০০ হাজার টাকা দরে কিনছি। কমপক্ষে প্রতিমণ পাটের দাম হওয়ার কথা ২৭০০-২৮০০ টাকা। সেই জায়গায় পাটের দাম অনেক কম। পাট যে কিনছি, বিক্রি করবো তার কোনো জায়গা নেই। বেসরকারি কিছু মিল আছে তারা আমাদেরকে সস্তা দাম বলছে, বিক্রি করলে করেন, না করলে নাই। তাই আমরাও কৃষকদের কাছ থেকে এ রকম দামে পাট কিনছি। এতো কষ্ট করে পাট চাষ করে কৃষকরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
স্থানীয় পাইকার জাহেদুল ইসলাম বলেন,পাটের দাম মণ প্রতি ২৫০০-২৬০০ টাকা ছিলো। আজকে সেই পাট সর্বোচ্চ ২০০০ টাকা মণ কিনছি। গত হাটে ৮০ মণ পাট কিনছিলাম। দাম না বাড়লে লোকসান গুনতে হবে। দাম বাড়ার সম্ভাবনা দেখছি না।
কুড়িগ্রাম জেলা মুখ্য পাট পরিদর্শকের কার্যালয়ের পাট পরিদর্শক এটিএম খায়রুল হক বলেন, কিছু দিন আগেও পাটের দাম ভালো ছিলো। কিন্তু দ্রুত এই দাম কমছে। দাম কমার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অধিকাংশ ব্যবসায়ী কারখানায় পাট সরবরাহের পর পুরো পাওনা টাকা বুঝে পাননি। তাই ব্যবসায়ীদের হাতে টাকা নেই। এজন্য ব্যবসায়ীরা পাট কেনায় আগ্রহ কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে দাম কমে গেছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, আমার ধারণা পাটের আমদানি বেশি থাকার কারণে দামটা একটু কমে গেছে। তবে কৃষকরা যদি পাট কিছু দিন ঘরে রেখে বিক্রি করেন তাহলে ভালো দাম পেতে পারেন।