অবৈধ দখলে মরতে বসেছে কাজলা নদী

মেহেরপুর থেকে ফিরোজুর রহমান :
এক কালের মেহেরপুরের খরস্রোতা কাজলা নদী এখন পরিণত হয়েছে সরু খালে। ড্রেজিং না করায় নদীর বুকে পলি জমে নাব্যতা হারিয়েছে। পরিনত হয়েছে আবাদি জমিতে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদীর দু’পাড় দখল করে চাষাবাদ শুরু করায় নদীটি সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। দ্রত খনন করে ভুমি দস্যুদের উচ্ছেদ না করলে নদীটি বেদখল হয়ে যাবে। তবে দ্রত সময়ের মধ্যে কাজলা নদী খননের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বাংলাদেশের ওপরে ভারতের জলাঙ্গীর সঙ্গে সংযুক্ত মাথাভাঙ্গা নদীর শাখা নদী কাজলা। এ নদী গাংনী উপজেলার হিন্দা মাঠ, নওয়াপাড়া, ভাটপাড়া, গাড়াডোব এবং সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের মধ্যদিয়ে প্রায় ৪০ কিঃমিটার বিস্তৃত হয়ে ভৈরব নদীতে গিয়ে মিশেছে। বর্ষা মৌসুমে পানিতে কানায় কানায় ভরে উঠতো কাজলা। কিন্তু নাব্য হ্রাস পাওয়ায় বর্ষাকালে নদীর দুই পাড়ের বেশির ভাগ আবাদি জমি পানিতে ডুবে যায়। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে দেখা দেয় সেচের পানির সংকট।
ব্রিটিশ শাসনামলে কাজলা নদী দিয়ে জাহাজে করে মালামাল কলকাতাসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হতো। নদীর গভীরতা ও নাব্যতা থাকায় বন্যার সৃষ্টি হতো না। দেশ বিভাগের পর থেকে নদীটি খনন না করায় নদীর বুকে পলি জমে ক্রমশঃ সরু হয়ে পড়ে। সুযোগ বুঝে স্থানীয় ভূমি দস্যুরা দু’পাড়ের চর দখল করে নিয়ে শুরু করে চাষাবাদ। নদীর দুপাড়ে দখল কওে অনেকেই করেছেন ঘরবাড়িসহ পাকা স্থাপনা। নদীর বুকে এখন আর কোন পানির দেখা মেলেনা । শুধু দেখা যায় সবুজের সমারোহ। নদী হয়েছে গোচারণ ভুমি।
নদীর পারের বাসিন্দা সুভাশ মন্ডল বলেন, একসময় নদির দুপারে অনেক জেলে এ নদির মাছ ধরে জিবীকা নির্বাহ করতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে পলি জমে নদী মরে হারিয়ে যাওয়ায় এখন আর মছ পাওয়া য়ায়না। নদিটি খনন হলে অনেকের জীবিকা নির্বহর পথ হতো।
প্রবিন ব্যক্তি আমিরুল ইসলাম বলেন, বৃট্রিশ আমলে বড় বড় জাহাজ চলতো এ নদিতে। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীদের ইন্ধনে কতিপয় লোকজন ভূয়া কাগজ পত্র তৈরী করে নিজারা ভোগ দখল করা ছাড়াও অন্যের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। আমি নিজেও এখানে জমি কিনেছি।
সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নদী দু’টি খননের ব্যবস্থা করলে শুষ্ক মৌসূমে কৃষকরা পানি পেতো, অন্ততঃ ১ হাজার একর ফসল আবাদের জন্য সেচ সুবিধা পেতো।। অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতো এলাকা বাসী।
মেহেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান বলেন, অন্তর্বতীকালীন সরকারের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে মেহেরপুর জেলায় অগ্রাধিকার প্রকল্পের বিষয়ে একটি গণশুনানী হয়েছে। সেখানে উঠে আসা দাবীর প্রেক্ষিতে কাজলা নদী খননের বিষয়টি অগ্রাধিকার তালিকায় কয়েক মাস আগেই অবহিত করা হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের সমীক্ষা চলমান আছে। আশাকরি অল্প সময়ে কাজলা খনন হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *