সরিষাবাড়ীতে চাঁদাবাজি ও ভূমি দখলের আতঙ্কে চরাঞ্চলের কৃষকেরা

মাসুদ রানা সরিষাবাড়ী জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরে সরিষাবাড়ীতে চাঁদাবাজি ও ভূমি দখলের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন চরাঞ্চলের কৃষকেরা। তাদের অভিযোগ, ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য লিটন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি ভূমিদস্যু চক্র বিঘা প্রতি ৮ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করছে এবং চাঁদা না দিলে আবাদি জমি ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে তারা।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার আওনা ইউনিয়নের কুমারপাড়া এলাকার ভুক্তভোগী কয়েকজন কৃষক সাংবাদিকদের অভিযোগ করে এসব তথ্য জানান।
পরে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সূত্রে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, আওনা ইউনিয়নের কুমারপাড়া মৌজায় প্রায় ৩০০ একর জমি রয়েছে। এসব জমির মালিক শ্রী বৈকন্ঠ মাঝি ও তার তিন ছেলে। কিন্তু তাদের কোন অস্তিত্ব নেই এই দেশে। নদী ভাঙ্গনের পর তারা কোথায় গেছেন, তা কেউ জানেন না।
তবে স্থানীয়রা জানান, এই জমিগুলো নদীগর্ভে যাওয়ার পূর্বে বৈকন্ঠ মাঝি ও তার ছেলেরা কিছু জমি বিক্রি করেছিলেন স্থানীয়দের কাছে। যার দলিলাদি রয়েছে বলে অনেকেই জানান।
আঃ হামিদ শিকদার নামে এক কৃষক বলেন, আমার বাপ দাদারা হিন্দুদের কাছ থেকে কয়েক বিঘা জমি কিনে চাষাবাদ করেছেন। স্বাধীনতার পূর্ব হতেই দীর্ঘদিন জমিগুলো নদীগর্ভে ছিল। তাই (বিআরএস) ভূমি জরিপের সময় জমিগুলো ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড না হয়ে খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত হয়।
এরপর যখন জমিগুলো চরাঞ্চল হয়ে জেগে উঠে। তখন ক্রয়কৃত পূর্বের মালিকগণ ও ভূমিহীনদের মধ্যে জমিগুলো বন্টন করে দেয় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। এরপর দীর্ঘ ৪০ বছর যাবৎ ভোগদখলে সবাই মিলেমিশে চাষাবাদ করে আসছে। কখনো কোন সমস্যা হয়নি।
কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর একটি প্রভাবশালী চক্র চরাঞ্চলের সমস্ত জমি খাস মনে বলে দাবি তুলে ফসলি জমির বিঘা প্রতি ৮ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করছে। না দিলে জমি ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন তারা। আমার কাছেও টাকা চেয়েছে। আমি দেইনি। আমি এ ব্যাপারে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
বিধবা নুরজাহান বেওয়া বলেন, আমি ১৮ শতাংশ খাস জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। এইজন্য তাদেরকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। যদি টাকা না দিতাম। তাহলে তারা অন্যজনকে জমি দিও দিতো বলে জানান তিনি।
সুরুজ মিয়া নামে আরেক ভুক্তভোগী কৃষক বলেন, আমি দুই বিঘা খাস জমিতে মরিচ ও ভূট্টা চাষ করেছি। এরজন্য ১৪ হাজার টাকা দিতে হয়েছে তাদের কে। জানতে চাইলে তিনি বলেন এসবের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক মেম্বার লিটন তালুকদার।
পাঁচপোটল ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক মোতাহার হোসেন মুক্তা বলেন, লিটন তালুকদার গত ৫ আগস্টের পর বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় অসহায় গরীব কৃষকদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি করছে। তার বিরুদ্ধে মাদক জুয়াসহ নানা অপকর্মের মামলা ও অভিযোগ রয়েছে। কুমারপাড়া মৌজায় তার বাবার এক শতাংশ জমিও নেই। তবুও সে অসহায় কৃষকদের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায় করছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
এব্যাপারে অভিযুক্ত লিটন তালুকদার এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কুমারপাড়া মৌজার জমি পরিমাপ ও সীমানা নির্ধারণ করতে আমিনের জন্য টাকা নেওয়া হয়েছে। কোন চাঁদা নেওয়া হয়নি।এটা মিথ্যা অভিযোগ।
সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ চাঁদ মিয়া বলেন, এখনো কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কৃষ্ণ পাল বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। তবে বিষয়টি আমি দেখবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *