সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাঘাইছড়ির সাজেক

মোঃ শামিম উদ্দিন- বাঘাইছড়ি প্রতিনিধি:সাজেক বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্গত বাঘাইছড়ি উপজেলার একটি ইউনিয়ন। বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত পর্যটন স্থল। এটি রাঙ্গামাটি জেলার সর্বউত্তরে মিজোরাম সিমান্তে অবস্থিত। সাজেক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন, যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। এর উত্তরে ভারতের ত্রিপুড়া, দক্ষিণে রাঙ্গামাটির লংগদু, পূর্বে ভারতের মিজোরাম ও পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা অবস্থিত। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফুট উচ্চতার সাজেক ভ্যালি যেন এক প্রাকৃতিক ভূ-স্বর্গ। প্রকৃতি এখানে সকাল বিকাল রঙ বদলায়। চারপাশে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো বিস্তীর্ণ পাহাড় সারি, আর তুলোর মতো মেঘ, এরই মধ্যে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে রয়েছে নৈস্বর্গিক সাজেক ভ্যালি।রাঙ্গামাটি জেলার সর্বউত্তরে ভারতের মিজোরাম সীমান্তে বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত অপরূপা সাজেক ভ্যালি বা সাজেক উপত্যকা যা বর্তমান সময়ে সকল বয়সী পর্যটকদের বিশেষ করে প্রকৃতিপ্রেমি এবং এ্যাডভেঞ্চারদের জন্য একটি জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য।এ ইউনিয়নে রয়েছে ‘রুইলু্ই’ এবং কংলাক নামে দুটি পাড়া। কর্ণফুলী নদী থেকে উদ্ভূত সাজেক নদীর নামে সাজেক ভ্যালীর নামকরণ করা হয়েছে। সাজেক ভ্যালিকে রাঙ্গামাটির ছাদ বলা হয়। সাজেকে লুসাই, পাংখোয়া এবং ত্রিপুরা উপজাতি বসবাস করে। সাজেক ভ্যালির শেষ সীমনয়ায় কলংক পাড়া গ্রাম, যেখানে রয়েছে লুসাই জনগোষ্ঠির বসবাস। এ গ্রাম থেকে কর্ণফুলী নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায়।

সাজেকের সারি সারি সবুজ পাহাড় আর শুভ্র মেঘের ভেলার অবগাহন আপনাকে রোমঞ্চিত করবেই। কখনো হঠাৎ গরম অনুভব করবেন আবার পরক্ষণেই মেঘের ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাবে আপনার চারপাশ। মেঘের অবগাহনে আপনার শরীর শীতল হয়ে যাবে। এখানে একইদিনে প্রকৃতির বিভিন্ন রকমের রূপ অবলোকন করা যায়। সাজেকের নৈসর্গিক দৃশ্য আর পাহাড়ে মেঘের উড়াউড়ি আপনাকে মুগ্ধ করবে। সাজেকে হ্যলিপেড থেকে সকাল বেলার সূর্যোদয় এবং বিকালের সূর্যাস্ত পর্যটকদেরকে উপহার দেয় অনুপম সৌন্দর্যসম্ভার। রাতের মেঘমুক্ত আকাশের তারার রাজ্যে আপনার হারিয়ে যেতে নেই কোন মানা। বছরের যে কোন সময় আপনি সাজেক যেতে পারেন। তবে বর্ষা, শরৎ ও হেমন্তকালে সাজেকের মেঘের সাথে পাহাড়ের উষ্ণ আলিঙ্গনের মাতোয়ারা বেশি দেখা যায়।সাজেক যদিও রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত, তবে খাগড়াছড়ি জেলার থেকে এর দূরত্ব কম এবং যাতায়ত ব্যবস্থাও ভালো। খাগড়াছড়িতে এর দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার, এবং দীঘিনালা থেকে ৪০ কিলোমিটার। এখানে উল্লেখ্য যে, সাজেক যেতে হলে অবশ্যই বাঘাইহাট পুলিশ এবং আর্মি ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিয়ে সেনাবাহিনীর নিরাপত্তার মাধ্যামে সাজেকে পৌঁছাতে হয়। পর্যটকদের সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আইন শৃংখলা বাহিনী সজাগ থাকে। সাজেকে আবাসন এবং আহারের জন্য বেশ কয়েকটি উন্নতমানের রিসোর্ট এবং রেষ্টুরেন্ট রয়েছে। প্রকৃতির অপার কৃপায় সাজেকভ্যালি যেন হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের দার্জিলিং।ইতোমধ্যে সাজেক ভ্যালি দেশি-বিদেশী পর্যটকদের কাছে পর্যটন এলাকা হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *