সমস্যার অন্ত নেই মাভাবিপ্রবি’র ভেটেরিনারি অনুষদে

মো:রাসেল চৌধুরী মাভাবিপ্রবি

নানা সমস্যায় জর্জরিত মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি)’র ভেটেরিনারি মেডিসিন এন্ড এনিমেল সায়েন্স অনুষদ। চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সিরাজগঞ্জ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজকে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ হিসেবে যুক্ত করা হয়। অনুষদটিতে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত দুটি ব্যাচে প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছেন। তবে একশত শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র এগারো জন যারা প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে কর্মরত রয়েছেন। অনুষদটিতে নেই কোন অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক। নানাবিধ সংকটে ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়নি অনুষদটি তে। শিক্ষার্থীরাও সেশনজট সমস্যায় পড়েছেন । শিক্ষক সংকটের ফলে গুণগত মানের শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষেও শিক্ষার্থী ভর্তি করানো নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

কোনো পরিচ্ছন্নতা কর্মী না থাকায় পুরো ক্যাম্পাসটির চারদিকে ঝোপ-ঝাড় ও ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। বিশ্বমানের ডিভিএম গ্র্যাজুয়েট তৈরির লক্ষ্যে হাতে কলমে শিক্ষার জন্য ল্যাবগুলোতে আনা অতি দামি কেমিক্যালগুলো ব্যবহারে দক্ষ জনবলের অভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে অনেক আগেই যার সবগুলোর মোড়কই খোলা হয়নি।সরেজমিনে দেখা যায় অনুষদটির খেলার মাঠ অনুপোযোগী। সেখানে বিশুদ্ধ পানির স্বল্পতা রয়েছে। বৈদ্যুতিক বাতির স্বল্পতা রয়েছে ও লোড শেডিং এর পরিমানও অনেক বেশী। জিমনেসিয়ামে তেমন কোন সরঞ্জাম নেই। কম্পিউটারের স্বল্পতা ( মাত্র ১৪টি কম্পিউটার) রয়েছে। পাঠাগারে বইয়ের স্বল্পতা (মাত্র ৮৪৩টি বই) রয়েছে। মেডিকেল সেন্টার ঘুরে দেখা গেলো সেখানে কোন ডাক্তার নেই ও মসজিদে মুয়াজ্জিনও নেই।

এই সমস্যাগুলো নিয়ে প্রতিদিনের সংবাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি শুভ দেকে শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান নূর জানান, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুশাসনের পরও দীর্ঘ নয় মাসেও সংকট সমাধান না হওয়ায় আমরা শিক্ষার্থীরা কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার আশংকা করছি। ভেটেরিনারি মেডিসিনের মতো টেকনিক্যাল বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে অপর্যাপ্ত শিক্ষক রয়েছে, যা মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি অন্তরায়। অন্যদিকে ল্যাবগুলোতে ব্যাবহারযোগ্য পর্যাপ্ত ল্যাব ইক্যুইপমেন্ট না থাকার কারণে আমরা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। ইতোমধ্যে করোনাসহ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে আমাদের দীর্ঘ ৩ বছরের সেশনজটে পড়তে হয়েছে। এ সকল সমস্যার স্থায়ী সমাধান এখনো হয়নি। আমরা উপাচার্য স্যারের নিকট সকল সমস্যা সমাধানের আবেদন করছি।

প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবা আক্তার বলেন, এই অনুষদের মেডিকেল সেন্টারে কোনো ডাক্তার নেই। কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে তাকে দূরবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় এবং এক্ষেত্রে মেডিকেল সেন্টারে কোনো অ্যাম্বুলেন্স নেই। এছাড়া শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য কোনো বাসের ব্যাবস্থা নেই। এখানে এনিমেল সেড থাকলেও শিক্ষা ও গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত প্রাণি নেই। চলমান সংকট সমাধানের মাধ্যমে তীব্র সেশনজট কমিয়ে আনতে (৪ থেকে ৫ মাসে সেমিস্টার) উপাচার্যের নিকট অনুরোধ করছি।

মাভাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিরাজগঞ্জ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজকে গত ১১ জানুয়ারি,২০২৩ এ মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ হিসেবে অন্তর্ভুক্তির নির্দেশ দেন। মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দিয়েছেন আপনারা একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমের বেশ কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। এটি যদি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি আকারে নিতে চাই তাহলে আমাকে একাডেমিক কাউন্সিল এ পাস করাতে হবে, এটি কি ফ্যাকাল্টি হবে সেটা পাস করাতে হবে, কি কারিকুলাম হবে, পাস করাতে হবে, এটি নিয়ে একটি অর্ডিন্যান্স করতে হবে। শিক্ষাথীদের ক্লাস শেষ পরীক্ষা নিতে গিয়ে দেখলাম এখানের সিলেবাস শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোকে, সেই অর্ডিন্যান্সের ভিত্তি‌ করে ক্লাসও হয়েছে। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পদ্ধতি ভিন্ন রকমের। দুটার মধ্যে সমন্বয় করে পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তুতি নিলাম। এই প্রতিষ্ঠানটি যদি পুরোপুরি আমাদের হস্তান্তর করা না করা হয় তাহলে আমরা যেটুকু এগিয়ে গিয়েছি এবং যে পরীক্ষাগুলো নেয়ার চেষ্টা করতেছি এই পরীক্ষাগুলো নেয়ার পরপরই আমাদের এক্টিভিটিস বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা আগাতে পারবো না। এই ক্যাম্পাসটি পরিচালনা করতে বাজেট ঘাটতি রয়েছে। যে কয়জন শিক্ষক তা খুবই কম। শিক্ষক কমপক্ষে ৪০ জন লাগবে। এছাড়া বেশিরভাগ শিক্ষক বিভিন্ন ভেটেরিনারি কর্মকর্তা।

তিনি আরও বলেন, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করেছেন এবং বড় অর্থ ব্যয় করেছেন সেই অর্থটা কাজে লাগানোর জন্য আমরা সরকারের কাছে এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, পশু পালন মন্ত্রণালয়, সর্বোপরি ইউজিসি কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করবো যতদ্রুত সম্ভব আমরা যে বাজেট সাবমিট করেছি বাজেট পাস করে পুরোপুরি আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। যেন আমরা সুষ্ঠুভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *