“শয়তান-শয়তানী, শিরক এবং হক”

লেখক মোঃ ওবায়দুর রহমান।।

হারুন শেখ স্টাফ রিপোর্টার বাগেরহাট জেলা।।

ভূমণ্ডল ও নভোমণ্ডলের একমাত্র অধিস্বর মহান স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। তিনি তাঁর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং একমাত্র তাঁরই এবাদত করার জন্যে জ্বীন ও ইনসান তথা মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন এবং নির্দিষ্ট একটি সময়কালের জন্যে তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে এই পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন।

প্রসঙ্গত, জ্বীনদের হিসেব বাদ দিয়ে এখানে মানবজাতি অর্থাৎ, বণী আদম হিসেবে আমাদের সকলেরই প্রথম এবং প্রধানতম করণীয় বিষয় হচ্ছে- আল্লাহর একত্ববাদ স্বীকার পূর্বক তাঁহার প্রেরিত খলিফা হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের জন্য নির্দিষ্টকালের এই পার্থিব জীবনে আল্লাহর একত্ববাদ সুপ্রতিষ্ঠিত করা।

উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহতালা মানবজাতিকে সৃষ্টি করত, তাদেরকে অন্যান্য সকল সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বদান করতে চাইলে ইতোপূর্বে পৃথিবীতে প্রেরিত জ্বীন জাতির মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট (নেককার জ্বীন) জ্বীন কথিত আজাজিল কর্তৃক অহংকার প্রদর্শন করার মাধ্যমে মানবজাতির শ্রেষ্ঠত্বকে অস্বীকার করা হয়। তৎপ্রেক্ষিতে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তখন আজাজিলকে অভিশম্পাত করার মধ্যদিয়ে তাকে চিরতরের জন্যে বেহেস্ত থেকে বিতাড়িত করেন এবং সারাজীবনের জন্যে অনুকম্পা আর ক্ষমা প্রাপ্তি থেকেও তাকে বঞ্চিত ঘোষনা করেন।

পরবর্তীতে, বেহেস্ত থেকে বিতাড়িত হয়ে শয়তান তখন মানবজাতির ক্ষতিসাধনের লক্ষ্যে বিবি হাওয়া (আঃ) এর মাধ্যমে আদম (আঃ)-কে নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণ করতে প্ররোচিত করলে আদম এবং হাওয়া (আঃ) কর্তৃক আল্লাহর নির্দেশ উপেক্ষা করে উক্ত নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণের কারণেই, বিবি হাওয়া (আঃ) এর লজ্জাস্থান উম্মোচিত হয়।

ঘটনার পরম্পরায় অভিশপ্ত শয়তানের প্ররোচনায় আল্লাহর নির্দেশ উপেক্ষা করার কারণেই, বিতাড়িত শয়তানের সহিত আদম (আঃ) এবং বিবি হাওয়া (আঃ)-কে আল্লাহতালা নির্দিষ্ট একটা সময়কালের জন্য পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। তবে, পৃথিবীতে প্রেরণের প্রাক্কালে অনুকম্পা বশত, মহান আল্লাহতালা তখন আদম (আঃ)-কে নির্দিষ্ট কিছু দিক-নির্দেশনা বা তাওহীদ প্রদান করেন। স্বল্প পরিসরে এই হলো আমাদের ইহজাগতিক সময়কাল তথা পার্থিব জীবনের খণ্ডকালীন পৃথিবীবাসের সার-সংক্ষেপ।

এক্ষেত্রে, উক্ত সার-সংক্ষেপের আলোকে আমরা ঘটনার পরম্পরায় ৪টি বিষয় সম্পর্কে ধারণা প্রাপ্ত হই। যথা-

১) আল্লাহর একত্ববাদ স্বীকার ও
সুপ্রতিষ্ঠিত করা।

২) অহংকারকারীর চূড়ান্ত পরিণতি বা
অভিশপ্ত শয়তান।

৩) বিতাড়িত শয়তান কর্তৃক নারী দেহ
উম্মোচন করা বা শয়তানী কর্মকান্ড।

৪) মহান আল্লাহতালা কর্তৃক নির্দিষ্ট
দিক-নির্দেশনা বা তাওহীদ।

যেকারণে, আদম সন্তান হিসেবে আমাদের সর্বপ্রথম পরিতায্য বিষয় হচ্ছে- ১) অহংকার প্রদর্শন না করা এবং ২) নারী দেহ প্রদর্শন করা হতে বিরত থাকা। কেননা, উক্ত কাজ দু’টি মূলত শয়তান এবং শয়তানী।

অতঃপর, বণী আদম হিসেবে আমাদের নিকট মহান আল্লাহতা’লার নির্দেশনা বা তাওহীদ হচ্ছে- ১) মহান স্রষ্টা হিসেবে আল্লাহতা’লার একত্ববাদ স্বীকার পূর্বক একমাত্র তাঁর প্রতি অনুগত থাকা এবং ২) নির্দিষ্ট সময়কালের এই পার্থিব জীবনে অন্যের হক নষ্ট না করা। প্রকাশ থাকে যে- পবিত্র কোরান মজিদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আল্লাহর সাথে শিরককারী কোনো ব্যক্তিকে মহান আল্লাহতালা কখনই ক্ষমা করবেন না এবং বান্দা হিসেবে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক অন্য কোনো ব্যক্তির হক নষ্টকারীকে আল্লাহতা’লা ক্ষমা করতে পারবেন না (যে ব্যক্তির হক নষ্ট করা হয়েছে, সে যতক্ষণ না তাকে ক্ষমা করে)। এতদ্ব্যতিত, মহান আল্লাহতা’লার অপার করুণায় তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে থেকে যে কাউকেই তার যে কোনো ধরণের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রদর্শন করতে পারেন।

অতএব, আসুন- বণী আদম হিসেবে সকলেই আমরা আমাদের প্রধানতম করণীয় এবং বর্জনীয় কাজগুলি সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করি এবং সেগুলিকে সঠিকভাবে প্রতিপালন করার চেষ্টা করি।

মহান আল্লাহ’তালা আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ ও তৌফিক এনায়েত করুন৷ আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *