শরীয়তপুর প্রতিনিধি
রাহুল রহমান
সারা দেশে সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষক সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নিয়মিত পাঠদান। নিশ্চিত করা যাচ্ছে না মানসম্মত শিক্ষা। প্রতিবছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে কিন্তু তার বিপরীতে শিক্ষকের পদ সৃষ্টি না করায় পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যাতে শিক্ষার মান দিন দিন কমছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়াও অন্যান্য ক্যাডারগুলোতে নিয়মিত পদোন্নতি হলেও সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে দীর্ঘদিন ধরে তা বন্ধ রয়েছে। এ নিয়েও শিক্ষকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এবং আন্দোলন মিটিং করেও এর কোন সুরাহা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
জানা গেছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজে অনার্স এবং ডিগ্রি এর শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪০০০ হাজার ,কিন্তু এর বিপরীতে শিক্ষক মাত্র ২২ জন জন। স্বনামধন্য এ কলেজটির কয়েকটি বিভাগের অবস্থা আরও করুণ। শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ১:১২০, ইতিহাসে ১:১৪৯ ও ব্যবস্থাপনা ১:১৮০ মার্কেটিং ১:২৩৫ এরকমই প্রায় প্রত্যেকটা বিভাগের একই অবস্থা, তারপরও তাদের জন্য আলাদা করে শিক্ষক পদ সৃজন হয়নি। অন্য বিভাগের শিক্ষকরা এখানে ক্লাস নিচ্ছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ হারুনুর রশিদ বলেন, ‘শিক্ষক সংকটের কারণে পাঠদানে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, ঠিকমতো শিক্ষকরা ক্লাস নিতে পারছে না এবং পাশের গড় হারও দিন দিন কমছে, এমতঅবস্থায় চলতে থাকলে শিক্ষার মানদন্ড ঠিক রাখা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে।
শুধু এ কলেজ নয়, শরীয়তপুর এর প্রায় সব সরকারি কলেজেই শিক্ষক সংকট এখন চরমে। বিশেষ করে, বাংলা, আইসিটি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা বিভাগের অবস্থা খুবই খারাপ। শিক্ষকের পদ না বাড়লেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। সংকট কাটাতে কয়েকটি বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কিছু সময়ের জন্য শিক্ষক সংযুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু সেটি যথেষ্ট নয়। এ ছাড়া পদ না থাকায় অনেক বিষয়ের পাঠদান করাতে হচ্ছে অন্য বিভাগের শিক্ষকদের দিয়ে ।
জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজে স্নাতক ও ডিগ্রি মিলিয়ে মোট শিক্ষার্থী প্রায় ৪০০০ হাজার। কিন্তু অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষসহ মোট শিক্ষক পদ রয়েছে মাত্র ২৫ টি। শূন্যপদ বাদ দিলে কর্মরত স্থায়ী শিক্ষক রয়েছেন ,মাত্র ২২ জন। অর্থাৎ ১৮১ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক মাত্র একজন। কলেজের কিছু বিভাগের অবস্থা আরও খারাপ। যেমন মার্কেটিং বিভাগে ২৩৫ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক মাত্র একজন এবং ম্যানেজমেন্ট বিভাগেরও একই অবস্থা এখানে ৫৪১ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক মাত্র ৩ জন শিক্ষক রয়েছে ।
শিক্ষকরা জানান, শিক্ষক সংকট এর জন্য আমাদের পাঠদান চালিয়ে নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এবং কষ্টও পেতে হচ্ছে ।
জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-অনুযায়ী, ২০১৮ সালের মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত হওয়ার কথা ১:৩০। এবং শিক্ষার মান আরও বাড়ানোর জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো বাস্তবায়ন করা স্বপ্নই থেকে গেল।
শিক্ষাবিদরা বলছে,, শিক্ষকদের অসন্তুষ্ট রেখে দেশের ২০৩০ ও ২০৪১ সালের ভিশনও পূরণ করা সম্ভব নয়। তাই নতুন পদ সৃষ্টির পাশাপাশি শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পদোন্নতি চালু করার উপর আরো জোর দিতে হবে ।