রোয়াংছড়ি -রুমা সীমান্ত পাশে কেএনএফ আস্তানা

এন্ড্রো এিপুরা

বান্দরবান প্রতিনিধি।।

দীর্ঘ প্রায় একবছর ধরে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি-রুমায় চলে আসা কেএনএফ’র সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে নিরাপত্তা বাহিনী। ফলে একটি উপজেলা বাদে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে। আর বসতি ছেড়ে চলে যাওয়া পাহাড়ি জনগোষ্ঠী নিজ ভূমিতে ফিরছে। ক্ষেত খামারে যাচ্ছেন জুমিয়া পরিবারগুলো।
রুমা-রোয়াংছড়ি সড়ক উন্নয়ন কাজে কেএনএফ’র ভয়ে কেটে যাওয়ায় দ্রুত কাজ শুরুর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে কিছু কিছু এলাকায় আতঙ্ক থাকলেও সেনাবাহিনী বলছে, শান্তি-শৃংখলা রক্ষায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে তাদের। কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বান্দরবান ভূখণ্ডে বসে সন্ত্রাস করতে পারবে না।
রোয়াংছড়ি-রুমার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কিছু পাড়ায় ভয়, আবার কিছু পাড়ায় সোচ্চার সাধারণ মানুষ। কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) বা বম পাটির ভয়ে দীর্ঘ এক বছর কঠিন সময় পার করছে তারা। অস্ত্রধারী কেএনএফ সদস্যদের ভয়ে এখনও বন্ধ অনেক স্কুল। জুম, ক্ষেত খামারসহ গ্রামে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় এই সন্ত্রাসী বাহিনী।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিয়মিত অভিযানের মুখে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বাহিনীটি। এক সময় রোয়াংছড়ি উপজেলার খামথাংপাড়া, দুর্নিবারপাড়া, ক্যাপ্লাংপাড়া গ্রামে শক্ত অবস্থানে থাকা কেএনএ বর্তমানে পিছু হটছে। কোণঠাসা দলটি আশ্রয় নিয়েছে পাক্যংপাড়া দুর্গম পাহাড়ে। স্থানীয়দের মতে, গত কয়েক মাসের তুলনায় পরিস্থিতি এখন অনেক উন্নতি হয়েছে।
রোয়াংছড়ি-রুমা সড়কে কিছু দূর পর পর সেনাবাহিনীর তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বম সম্প্রদায়ের একাধিক বৃদ্ধ নারী ও পুরুষ জানান, কেএনএ নিজ জাতিগোষ্ঠীর কিছু উচ্ছৃখল ও পথভ্রষ্ট যুবকের কারণে পুরো বম জাতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। অস্ত্রধারী এসব যুবকরা এসে প্রায় সময় গ্রামে হুমকি ও লুটপাট করে। অন্যদিকে নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। যার কারণে সহজ-সরল উপজাতিরা এলাকা ছাড়া।
তারা জানান, কেএনএফ’র হুমকি ও চাঁদাবাজির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে রোয়াংছড়ি-রুমা সড়কের উন্নয়ন কাজ। এই সড়কটির কাজ দ্রুত শেষ হলে এলাকার স্বাভাবিক জীবন উন্নতিসহ ধস নামা পর্যটন খাত ঘুরে দাঁড়বে।

এদিকে রোয়াংছড়ি-রুমা সড়ক উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন মোহাম্মদ ইয়াছির আরাফাত বলেন, প্রথমে নিরাপত্তাজনিত এবং পরবর্তী বন্যার কারণে সড়কটির উন্নয়ন কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে রুমা অংশে কাজ চলছে। সড়কটি উন্নয়নে বরাদ্দ হাতে এলে কাজ দ্রুত শুরু হবে।
রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহ্লা অং মার্মা বলেন, আগের তুলনায় এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে এনেছে সেনাবাহিনী। এলাকার শান্তি-শৃংখলা রক্ষায় তারা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। তবে রোয়াংছড়ি-রুমা সড়কটির কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান।

জানতে চাইলে বান্দরবান সেনা জোনের জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মাহমুদুল হাসান বলেন, সীমান্ত সড়কসহ পাহাড়ের সার্বিক পরিস্থতির উন্নয়ন এবং অপারেশন উত্তরণের আওতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে কেএনএফ সদস্য গ্রামের সাধারণ মানুষের মাঝে মিশে থাকলেও শেষ রক্ষা হবে না তাদের। মানুষের শান্তি-শৃংখলা রক্ষার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে নিরাপত্তা বাহিনী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *