১২-০৮-২০২৪
পাভেল ইসলাম মিমুল রাজশাহী ব্যুরো
শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পরপরই আত্মগোপনে চলে গেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র ও কাউন্সিলররা। ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাসিক এলাকার নাগরিক সেবা কার্যক্রম। ওয়ার্ড কাউন্সিলদের কার্যালয়গুলো রয়েছে তালাবন্ধ।
গত ৫ আগস্টে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে কোনও ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় খোলা পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয়, কাউন্সিলরের নিয়ন্ত্রণাধীন কর্মীদেরও মহল্লা-মহল্লায় পরিচ্ছন্নের কাজ করতে দেখা যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মী বলেন, কাউন্সিলর নেই। কার্যালয়ে ভাংচুর হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র। হাড়িয়ে গেছে অনেক কিছু। সবমিলে তারা গত চার-পাঁচদিন কাজে বের হননি।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, মেয়র-কাউন্সিলররা কোনও কারণে অনুপস্থিত থাকলে নাগরিক সেবা খুব বেশি বিঘ্নিত হবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসিনা সরকারের পতনের পর ওই দিন সন্ধ্যায় রাজশাহী নগর ভবন পুড়িয়ে ভস্মীভূত করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। লুট করে নিয়েছে সিটি ভবনের জিনিসপত্র। এমন পরিস্থিতিতে নগরভবনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসে কাজ করার মতো অবস্থাও নেই। যদিও লুটপাট হওয়া কম্পিউটার, চেয়ার, টেবিলসহ কিছু জিনিসপত্র দুর্বৃত্তরা নগরভবনে ফেরত দিয়েছে।
এদিকে সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের প্রায় সবগুলোই গত ৪ দিন থেকেই বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সিটি করপোরেশন এলাকায় নাগরিক সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। গত কয়েকদিনে সিটি করপোরেশনের আওতাধীন নগরবাসীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম, জরুরি সেবা, ওয়ার্ড ভিত্তিক বিভিন্ন নাগরিক সেবা চরমভাবে ভেঙে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২১ জুন রাসিক নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন- আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ওই নির্বাচনে রাসিকের ৩০টি ওয়ার্ডের ২৬টিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এই কাউন্সিলদের থানা, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে রয়েছেন।
তবে গত সোমবার (৫ আগস্ট) শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে প্রকাশ্যে আসেনি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনসহ তার সকল কাউন্সিলর। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করাও সম্ভব হচ্ছে না। এরইমধ্যে মেয়র লিটন ভারতে চলে গেছেন বলে বিশ্বস্ত একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পালাতে গিয়ে দর্শনা সীমান্তে আটক হয়েছেন রাসিকের-১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা রজব আলী।
তবে সে সময় কাউন্সিল রজব আলী দাবি করেন, ‘তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যাচ্ছিলেন।’ রাসিকের বাকি কাউন্সিলররা রয়েছেন আত্মগোপনে।
নগরীর ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এলাকার রাস্তায় সড়কবাতিগুলো জ্বলছে। তবে অনেকগুলো নষ্ট অবস্থায় রয়েছে। ফলে একধরনের ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করছে। এছাড়া মাঠে পুলিশ নেই। তাই অন্ধকারে সঙ্গত কারণে ছিনতাই-চুরি ও লুটপাট হতে পারে।
নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রজব আলী বলেন, বুধবার (৮ আগস্ট) জরুরি একটি কাজে কাউন্সিলর অফিসে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি তালাবদ্ধ। চলে এলাম, কাজ হলো না।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ নাগরিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে যেহেতু দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছে। আমি আহ্বান জানাব, যেসব নাগরিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অচল রয়েছে সেগুলো আগে জরুরি ভিত্তিতে সচল করার উদ্যোগ নেওয়া হোক।
তিনি বলেন, দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিটি করপোরেশনের মেয়র-কাউন্সিলরদের অনেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন। এর ফলে নাগরিক সেবা যাতে বিঘ্নিত না হয় সে জন্য সেনাবাহিনী কিংবা প্রশাসনের উদ্যোগে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন বলেন, সারাদেশে যে অবস্থা, আমাদেরও একই অবস্থা। তবে নাগরিক সেবা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বিষয়টা দেখছি।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘সবাই না,কেউ কেউ আছেন। আজই প্রথম অফিস শুরু হলো। আমরা খবর নিচ্ছি। যদি এরকম হয় তারাতো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে। তাদের বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে আমরা সেখানে লিখবো।
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ডা. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন,জনপ্রতিনধিদের একটি বড় অংশ এখনো অফিসে আসেননি। তারা না থাকলেও একজন করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা আছেন। তারাও ফাইল নিষ্পত্তি করতে পারবেন।