আবুবকর সম্পদ, জবি প্রতিনিধি:
২০২২ সালের পহেলা জানুয়ারি ইব্রাহিম ফরাজিকে সভাপতি ও আকতার হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের ৩৫ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন।
সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ১০-১১ শিক্ষাবর্ষ ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন ১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন । ইব্রাহিম ফরাজীর ছাত্রত্ব শেষ ৮বছর আগে এবং আকতার হোসেনের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে ৬ বছর আগে। ইব্রাহিম-আকতারের কমিটিতে স্থান পাওয়া ৩৫ জন নেতার অধিকাংশই নিষ্ক্রিয়। কেউ কেউ আবার স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উপ-কমিটিতে, আবার অনেকে রাজনীতিতে সক্রিয় হলে, হতে হয় নানা ধরনের হুমকি ধামকির শিকার বলে অভিযোগ করেন আংশিক কমিটিতে স্থান পাওয়া কিছু নেতারা ।
দফায় দফায় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার ঘোষণা দিয়েও তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি জবি শাখা ছাত্রলীগ। কমিটির পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়ার আগে নিজেরাই মেয়াদোত্তীর্ণ বনে গেলেন।ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সাংগঠনিক জেলার মর্যাদা পায়। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১০(খ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘জেলা শাখার কার্যকাল এক বছর’। সেই হিসেবে ২০২৩ সালের পলেহা জানুয়ারি শেষ হয়েছে ইব্রাহিম-আকতারের কমিটির মেয়াদ।
ছাত্রলীগের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জবি শাখার কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার লক্ষে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা খসড়া তালিকা তৈরি করেছেন। ২০২২ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি গঠিত হয়। কমিটি গঠনের দুই বছর পার হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণায় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা। এতে একদিকে যেমন নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না, অন্যদিকে
পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সিভি সংগ্রহ করা হলেও এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে ফলে পদ প্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মাঝে বেড়েছে হতাশা।
নেতাকর্মীদের দাবির মুখে বিভিন্ন সময়ে শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার প্রতিশ্রুতি শুনালেও তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বলে অভিযোগ পদবঞ্চিত কর্মীদের।এদিকে যথার্থ সুযোগ না দেওয়া জুনিয়র দ্বারা অপমান ও পদ প্রাপ্তীর অনিশ্চয়তায় ক্যাম্পাস ছেড়েছেন অনেকে। এছাড়াও জাতীয় কর্মসূচী ব্যতীত পদপ্রত্যাশীদের দেখা মিলছে না ক্যাম্পাসে।
পদপ্রত্যাশী একাধিক নেতা- কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন সময়ে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করার ঘোষণা দিয়ে আসছিলেন। বর্তমান সভাপতি সাধারণ সম্পাদক তাদের কর্তৃত্ব ধরে রাখার জন্য গত বছরগুলোতে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কথা বলেননি। যখনই জুনিয়ররা কমিটি নিয়ে কথা বলতে গেছেন তখন তারা সিভি আহ্বান করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আমাদের থামিয়ে দিয়েছেন। অনেক দিন পড়াশোনা থেকে দূরে থাকার কারণে এখন চাকরি পড়াশোনাও মনে বসছে না,বলে অভিযোগ করেন পদপ্রত্যাশী অনার্স ফাইনাল ইয়ারের এক শিক্ষার্থী।
আংশিক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ রাসেল বলেন, তারা আমাদের ক্যাম্পাসের অনেক সিনিয়র। নিজেদের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে পূর্ণাঙ্গ করতে চাই না সভাপতি সাধারণ সম্পাদক।কমিটি ভেঙে যাওয়ার ভয়ই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করছেন না তারা।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে ক্যাম্পাসের আশেপাশে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, সমিতি ও হাসপাতাল থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজি করার বিষয়টি সামনে এসেছে। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এক দোকানদার বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, টিএসসির থেকে ছাত্রলীগের নামে প্রতিদিন চাঁদা উঠানো হয় প্রতিটি চায়ের দোকান থেকে ২০০ টাকা ও ভাতের হোটেল থেকে ৮০০ টাকা।
এ বিষয়ে জবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. ইব্রাহিম ফরাজী বলেন, আমরা খুব শিগগির পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিবো। কমিটি জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে হয়৷ টিএসসি-এর চাঁদার বিষয়ে জানাতে চাইলে তিনি বলেন,ছাত্রলীগ কখনো চাঁদাবাজী, অন্যায় দুর্নীতির প্রশ্রয় দেয় না,অভিযোগ ভিত্তিহীন বলেন মন্তব্য করেন তিনি।
সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন,খুব দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে। বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে আছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের নামে কেউ চাঁদাবাজি করে না, কারো বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জবি ছাত্রলীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি কেন্দ্রীয় ফোরামে আলোচনা হয়েছে। খুব দ্রুতই জবি ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দিয়ে তৃতীয় সম্মেলন আয়োজন করা হবে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকে মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করার জন্য বার বার কল দেওয়া হলেও তাদেরকে পাওয়া যাইনি।