মেডিকেলে চান্স পেলেন কাঠমিস্ত্রির মেয়ে সাদিয়া, ভর্তি নিয়ে শঙ্কা

নুর হোসেন- চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ

নবম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় মায়ের শরীরে বড় ধরনের অপারেশন করতে হয়েছে। সরকারি মেডিকেলে অপারেশন না করে চিকিৎসক নিজের ব্যক্তিগত হাসপাতালে অপারেশন করতে বাধ্য করেন। কিন্তু আমার দরিদ্র বাবার পক্ষে অপারেশনের টাকার জোগান দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমার মামা সব টাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সেই থেকে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছি আমাকে চিকিৎসক হতে হবে। অবশেষে আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার স্বপ্ন পূরণে প্রথম ধাপ এগিয়েছি। এবার ভর্তি পরীক্ষায় মেডিকেলে চান্স পেয়েছি।’

কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের মিরসরাই পৌরসভার পূর্ব গোভনিয়া এলাকার কাঠমিস্ত্রি ইলিয়াসের মেয়ে উম্মে সাদিয়া (২০)। কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায় বলে টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন তিনি।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাঠমিস্ত্রি ইলিয়াসের দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে সাদিয়া সবার বড়। ছোটকাল থেকেই তিনি পড়াশোনায় মেধাবী। জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করেন। ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিসহ বিভিন্ন ইভেন্টে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। দরিদ্রতা তার মেধাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।

দুই কক্ষের ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন ইলিয়াস। যা আয় করেন তা দিয়ে সংসার ও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ জোগান দিতে খুব কষ্ট হয়। তারপরও সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধ রাখেননি।উম্মে সাদিয়া বলেন, ‘প্রথমবার ভর্তি পরীক্ষায় মেডিকেলে টিকতে না পেরে খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম কিন্তু হাল ছাড়িনি। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ফরেস্ট্রি বিভাগে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করে যাচ্ছি। পাশাপাশি দ্বিতীয়বার মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার মা-বাবার দোয়ায় এবার ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি।’তিনি আরও বলেন, ‘যেসব শিক্ষক আমাকে এতটুকু আসতে সহযোগিতা করেছেন, আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। আমি চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই। একজন মানবিক চিকিৎসক হতে চাই।’

সাদিয়ার বাবা মো. ইলিয়াস বলেন, ‘আমার অনেক কষ্টের সংসার। তারপরও মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে নিয়েছি। প্রথমবার না হলেও দ্বিতীয়বার আমার মেয়ে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। তবে ভর্তি হতে অনেক টাকা প্রয়োজন। আমার পক্ষে এতো টাকা জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। ভর্তির পর আরও অনেক খরচ হবে। কীভাবে মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাবো এ নিয়ে চিন্তায় রয়েছি।’

মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, সাদিয়া অনেক মেধাবী। সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে সাদিয়ার চিকিৎসক হওয়ার পথে কোনো বাধা থাকবে না।এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন বলেন, দরিদ্র পরিবার থেকে সাদিয়ার মেডিকেলে চান্স পাওয়া অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত। আজ দুপুরে তার পরিবারকে উপজেলা প্রশাসন থেকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতে পড়াশোনার জন্য সহযোগিতা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *