ভুরুঙ্গামারীতে এমপিওভুক্ত স্কুলে শিক্ষার্থীদের বসার জায়গা দখলে রেখেছে আর্বজনার বস্তা।

বিপুল রায়- কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়নের এক কিলোমিটারের মধ্যে এফ এ টেকনিক্যাল অ্যান্ড আইটি ইনস্টিটিউট এবং এফ এ মহিলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড আইটি ইনস্টিটিউট এবং ভুরুঙ্গামারী মডেল টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বিএম কলেজসহ ভুরুঙ্গামারী টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজে অনিত্য পাঠদান আর সীমিত শিক্ষার্থী তবুও হয়েছে এমপিওভুক্তি। প্রতিষ্ঠানের নেই অস্তিত্ব ফলে কাগজে-কলমে শিক্ষা কার্যক্রম চলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি, গত (২৩অক্টোবর ২০১৯খ্রিঃ) দুই হাজার ৭৩০ প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমপিওভুক্তির মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজ, মাদরাসা, কারিগরি কৃষি, ভোকেশনাল, বিএম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

জানা গেছে, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়নে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। দিয়াডাঙ্গা আইডিয়াল টেকনিকেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফেরদৌসুল আরেফিন তার স্বার্থ হাসিলে তার ভাই আল মামুনকে অধ্যক্ষ করে এফ এ টেকনিক্যাল অ্যান্ড আইটি ইনস্টিটিউট এবং এফ এ মহিলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড আইটি ইনস্টিটিউট দুটি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হলেও দুটি প্রতিষ্ঠানের নেই কোনো অস্তিত্বই। অভিযোগ রয়েছে দিয়াডাঙ্গা আইডিয়াল টেকনিকেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফেরদৌসুল আরেফিন প্রতিষ্ঠানে সর্বদা অনুপস্থিত থেকে তার ছোট ভাই আল মামুনকে দিয়ে তার প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। অপরদিকে এফ এ টেকনিক্যাল অ্যান্ড আইটি ইনস্টিটিউট এবং এফ এ মহিলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড আইটি ইনস্টিটিউট দুটি প্রতিষ্ঠান যার দুটি পরিত্যক্ত টিনশেড ঘর এবং প্রতিষ্ঠান দুটির কিছু ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের নেই পাঠদান আর কাগজে কলমে চলছে প্রতিষ্ঠান। অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দেখিয়ে এমপিওভুক্তের অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে ভুরুঙ্গামারী মডেল টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড বিএম কলেজ এবং ভুরুঙ্গামারী টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজে অনিত্য পাঠদান আর সীমিত শিক্ষার্থী দিয়ে চলছে অনিয়মিত পাঠদান।

ভুরুঙ্গামারীতে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বিএম কলেজে অনিত্য পাঠদানেও এমপিওভুক্তি এফ এ মহিলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড আইটি ইনস্টিটিউট জরাজীর্ণ আর পরিত্যক্ত ভবনটি দীর্ঘ ৪বছর ধরে গরু হাটে মাদকাসক্তদের আস্তানা ছিলো। সে স্থান পরিবর্তন করে অতি-গোপনে গত এক বছর থেকে ভুরুঙ্গামারী জামতলা মোড়ের পশ্চিমে লাকি হল সংলগ্ন একটি জমির উপরে একটি টিনের ঘরে সাইনবোর্ড টাঙ্গানো তবে নেই চেয়ার-ব্রেঞ্চ ও শ্রেণিকক্ষ। অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান চলছে কাগজ -কলমে। এদিকে দেওয়ানের খামার (সহকারী পুলিশ সুপার) কার্যালয়ের পেছনে অবস্থিত এফ এ টেকনিক্যাল অ্যান্ড আইটি ইনস্টিটিউট টিনশেড প্রতিষ্ঠানে নেই কোনো শিক্ষার্থী, চেয়ার-ব্রেঞ্চ ও শ্রেণিকক্ষ আর বন্ধ পাঠদান কার্যক্রম এবং ল্যাব কিংবা কম্পিউটার নেই। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা এখন পর্যন্ত কোনো কারিগরি প্রশিক্ষণের ক্লাসই করতে পারেনি।

কাগজ-কলমে স্থান ও শিক্ষার্থীদের নাম ঠিকঠাক থাকলেও বাস্তবে চিত্র যেন ভিন্ন। এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পাঠদান নেই। তাদের পরীক্ষা নেয়া হয় দিয়াডাঙ্গা আইডিয়াল টেকনিকেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। প্রতিষ্ঠান দুটি এমপিওভুক্তের তালিকায় কীভাবে গেল এ নিয়ে রয়েছে জনমনে প্রশ্ন।এফ এ মহিলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড আইটি ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মোদ্দাছেরুল ইসলাম স্বীকার করেন, আমরা লাকি হল সংলগ্ন নতুন করে প্রতিষ্ঠানের নামে জমি ক্রয় করেছি। একটি টিনের ঘর তুলেছি। আগামী বছর থেকে পাঠদান শুরু করবো এখানে। আপাতত দুটি প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা দিয়াডাঙ্গা আইডিয়াল টেকনিকেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নিচ্ছি।

এফ এ টেকনিক্যাল অ্যান্ড আইটি ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আল-মামুন বলেন, এমপিওভুক্ত হয়েছে কিন্তু বেতন-ভাতা না পাওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠানে পাঠদান হচ্ছে না। তবে প্রতিষ্ঠানে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি আছে। দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের অর্থ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চালিয়ে আসা হচ্ছে। সরকারি বা বেসরকারি কোনো অনুদান পাইনি। এমপিও হয়েছে তবে বেতন পেলে সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে। ঘনবসতি এলাকায় ২৮শতক জমিতে স্থাপিত এ প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ৩০০শিক্ষার্থী। শিক্ষক আছেন ১৪জন।

স্থানীয় বাসিন্দা একরামুল হক, পাপ্পু, মফিজুল হক, মাইদুল ইসলাম, মিজান হোসেন ও মন্টু ব্যাপারি বলেন, এফ এ মহিলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড আইটি ইনস্টিটিউট নামে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। তবে লাকি হল সংলগ্ন একটি ছোট্ট টিনের ঘরে সাইনবোর্ড ঝুলছে। দেওয়ানের খামারের এফ এ টেকনিক্যাল অ্যান্ড আইটি ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থী ভর্তি থাকলেও নেই পাঠদান তবে দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত আছে। দুই প্রতিষ্ঠানের মালিক ফেরদৌসুল আরেফিন নিজেও এমপিওভুক্ত দিয়াডাঙ্গা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ। তার বেশকিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে রংপুর ও ভুরুঙ্গামারীতে।

এমপিও স্বীকৃতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোতে তার আপন ছোট ভাই ও চাচা অধ্যক্ষ হিসেবে আছেন।এফ এ টেকনিক্যাল অ্যান্ড আইটি ইনস্টিটিউট এবং এফ এ মহিলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড আইটি ইনস্টিটিউটের মালিক ফেরদৌসুল আরেফিন বলেন, গত ২৩অক্টোবর ২০১৯সালে প্রতিষ্ঠান দুটি এমপিওভুক্ত হলেও শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন না পাওয়ায় প্রতিষ্ঠান দুটি ঠিকমতো চলছে না।কাগজপত্র সব ঠিক আছে। তবে, ছাত্র-ছাত্রী কম থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালানো কঠিন হয়েছে। এর মধ্যে তার কর্মরত প্রতিষ্ঠানটি আগেই এমপিও ছিল। এবার তার নিজের দুটি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার শামছুল আলম বলেন, ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করে নাই।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, অভিযোগ শুনলাম। তদন্ত করে অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (ভোকেশনাল) মো. সালাহউদ্দিন আহাম্মদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করেন। তদন্ত সাপেক্ষ অনিয়ম পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *