ছেলের নিষ্পাপ চাহনি জাহিদকে মনে করিয়ে দিত বাবা তুমি জিততে এসেছ হারতে নয়।

মো:রাসেল চৌধুরী

মাভাবিপ্রবি

মো. জাহিদ হাসান অপু, ৪১ তম বিসিএস পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে প্রশাসন ক্যাডারে ১৩৭তম স্থান অর্জন করেন যা তার প্রথম পছন্দ ছিল। তার এই সাফল্যের পিছনে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে তার মা-বাবা, স্ত্রী, একমাত্র ছেলে এবং দুই ভাই। বিসিএস যাত্রায় মা-বাবা ছিলেন অগ্নিশিখা এবং স্ত্রী ছিলেন তার জ্বালানী। তিনি বিসিএস এর মত এত দীর্ঘ পরীক্ষায় যখন মনোবল হারিয়ে ফেলতেন তখন তার ছেলের নিষ্পাপ চাহনি মনে করিয়ে দিত বাবা তুমি জিততে এসেছ হারতে নয়। তার আব্বা বলেন ,”বাবা আর একটু কষ্ট কর, দেখ বিসিএস ক্যাডার হওয়া সাধনার ব্যাপার।”
জাহিদের জন্ম হয়েছে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড এর কাকচর নামক গ্রামে। বাবা বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকুরী করার সুবাধে বেড়ে ওঠা সুরমা নদীর পাড়ে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক রেলওয়ে কোয়ার্টারে। ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস.এস.সি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়ার পর ভর্তি হন ময়মনসিংহের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজে। সেখান থেকে এইচএসসি পরীক্ষাতেও জিপিএ ৫ পেয়ে পরবর্তীতে বিএসসি কোর্সে ভর্তি হন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। পরবর্তীতে এমএস করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষাতেই প্রথম শ্রেণি অর্জন করেন।
মাস্টার্স শেষে তার সহপাঠী বন্ধুরা যখন প্রায় সবাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাচ্ছিল তখন তার চিন্তা হলো দেশেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পরিচয় তৈরি করতে হবে। তাই সর্বপ্রথম তিনি ব্যাংক জবের কথা চিন্তা করলেন যেটা খুব অল্প সময়ের মধ্যে পাওয়া সম্ভব। মাস্টার্স পাশের এক বছরের মধ্যেই ২০১৮ সালে এসে কয়েকটা ব্যাংকে অফিসার পদে চাকুরী হলো তার পরবর্তীতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে যোগদান করেন। কিন্তু মনটা বিসিএস পরীক্ষায় পড়ে থাকত। তখন তিনি একসাথে ব্যাংক বিসিএস পড়া শুরু করেন। ২০২০ সালে এসে আবার ৩টা ব্যাংকে সিনিয়র অফিসারের চাকুরী হয় এবং তিনি রূপালী ব্যাংকে যোগদান করেন। এসময় করোনা প্রাদুর্ভাব এর মধ্যে ৪০ তম বিসিএস ভাইবা দেন কিন্তু নন-ক্যাডার হন। পরবর্তীতে ৪১তম বিসিএস পরীক্ষার সময় ব্যাংকের প্রচন্ড কাজের চাপের মধ্যে থেকেও কর্মরত ব্যাংকের ম্যানেজার আন্তরিক সহযোগিতায় তিনি বিসিএসে নির্ভার থেকে পরীক্ষা দিয়েছিলেন এবং প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন।

নতুনদের উদ্দ্যেশ্যে জাহিদ বলেন, “বিসিএস পরীক্ষা যতটা না মেধার তার চেয়ে বেশী ধৈর্যের। তাই শুধু বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে পরে না থেকে অন্য চাকরির জন্য সমান তালে প্রস্তুতি নিতে হবে নতুবা একটা সময় হয়ত পূর্বের অনেকের মত খালি হাতে ফিরতে হবে।
বিসিএস পরীক্ষায় প্রস্তুতির জন্য পড়ার চেয়ে বাদ দেয়া শিখতে হবে আগে। নতুবা এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগেই খেই হারিয়ে ফেলার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। প্রিলির পড়াকে কিভাবে লিখিত পরীক্ষায় ব্যবহার করা যায় সেই কৌশল রপ্ত করার পাশাপাশি কনফিডেন্স এর সাথে একটি ভালো ভাইবা দিতে হবে। তবেই রেজাল্ট শীটে নিজের রোলটি বহুল কাংখিত ক্যাডার লিস্টে পাওয়া যাবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *