(বিশেষ প্রতিবেদন)
মো:আসাদুজ্জামান খান
মেহেরপুর জেলা (সদর) প্রতিনিধি:-
শরৎকে বিদায় দিয়ে শুরু হয়েছে হেমন্ত। দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। দিনভর গরম থাকলেও সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে প্রকৃতি।
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। ষড়ঋতুতে শীতের আগমন বৈচিত্র্যময়। ঋতুচক্র ৬টি ঋতুতে ভাগ হয়েছে। প্রকৃতি আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রভাবে বছরের ১২টি মাস দুই মাস করে ৬টি ঋতুতে ভাগ হয়েছে। এই ৬টি ঋতু হলো গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। তবে সব ঋতুর প্রাধান্য ও প্রভাব এক নয়। গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীত প্রত্যক্ষ আর শরৎ, হেমন্ত ও বসন্ত পরোক্ষভাবে প্রকৃতিতে প্রতিফলিত হয়। গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীত এই তিনটি ঋতু প্রকৃতির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। জনজীবনে প্রচন্ড নাড়া দেয়। শরৎ, হেমন্ত ও বসন্ত জনজীবনে অনুভূত হয়, যেন তার আগমন নীরব-নিভৃতে। ঋতুচক্রে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ গ্রীষ্মকাল, আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল, ভাদ্র-আশ্বিন শরৎকাল, কার্তিক-অগ্রহায়ণ হেমন্তকাল, পৌষ-মাঘ শীতকাল ও ফাল্গুন-চৈত্র বসন্তকাল। গ্রীষ্ম-বর্ষার পর আসে শরৎ। কিছুটা পরে তা মিশে যায় হেমন্তে। শীতের অবস্থান হেমন্তের পরে এবং বসন্তের আগে। শীতকাল পৌষ ও মাঘ, এই দুই মাস হলেও এর শুরু কিছুটা আগে এবং শেষ হয় কিছুটা পরে। পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস নিয়ে শীতকাল। বাংলাদেশের ঋতুচক্রে অন্য ৫টি ঋতু থেকে শীতকালের বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। শুষ্ক চেহারা আর হিমশীতল অনুভব নিয়ে আসে শীত। এ সময় গ্রামবাংলা যেন শীতের চাদরে
মুড়ি দেয়। সন্ধ্যার পর ও ভোরবেলা ঘন কুয়াশার ধবল চাদরে ঢাকা থাকে। হিমেল হাওয়ায় হাড় কাঁপিয়ে শীত জেঁকে বসে। শীতের দাপটে প্রকৃতি নীরব হয়ে যায়। সবুজ প্রকৃতি রুক্ষ মূর্তি ধারণ করে। শীতের শুষ্কতায় অধিকাংশ গাছপালার পাতা ঝরে পড়তে থাকে। শীত তার চরম শুষ্কতার রূপ নিয়ে প্রকৃতির ওপর জেঁকে বসে। রুক্ষতা, তিক্ততা ও বিষাদের প্রতিমূর্তি হয়ে শীত আসে। শীতের তান্ডবে প্রকৃতি বিবর্ণ হয়ে পড়ে।
শীতের আগমন সাড়া পড়েছে প্রকৃতিতে, এই আগমনে মানবসমাজে সৃষ্টি হয় নতুন আমেজ ও উৎসব। শীতের আগমন নানারুপ নিয়ে। উঁচু উঁচু গাছের মাথায় তার প্রলেপ কুয়াশার বিস্তার, গাছের পাতার গায়ে হলদে রঙ। শোনা যাচ্ছে তাদের ঝরে পড়ার শব্দ। শুধু ভোরে কয়েক স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ আর শীর্ণদেহী, জীর্ণ পোশাকের পাতাকুড়ানীদের সঙ্গে দেখা হয় তাদের। বাতাসে শীতের গন্ধ! গরম চা আর ধোঁয়াওঠা ভাপাপিঠা পথে পথে। বদলে যাচ্ছে অনেক কিছু। হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে আসছে শীত।
শীতার্ত উত্তরের বাতাস ধেয়ে এসে মানুষের শরীরে যেন হুল ফোটায়। শহরের দালানকোঠার ভিড়ে শীতল হাওয়ার সঙ্গে কুয়াশার জঙ্গল একাকার হয়ে যায়। প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে গিয়ে বোঝার উপায় থাকে না, এতে কতটুকু কুয়াশা আর কতটুকু কার্বন ডাইঅক্সাইড। শীতে মাঠ থেকে পানি নেমে যাওয়ায় দিগন্তজোড়া মাঠ গাঁয়ের মানুষের কাছে চলাচলের যোগ্য হয়, যা বর্ষায় থাকে অগম্য। খটখটে পায়েচলা কাঁচা সড়ক ধরে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে যেতেও বাধা নেই। মানুষের চলাচলও বেড়ে যায় এ সময়। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যাওয়া-আসা ও দূর গাঁ থেকে বাপের বাড়িতে বেড়াতে আসা, বধূর প্রতীক্ষার অবসান ঘটায় এ শীত ঋতু। গাঁয়ের বাজারগুলোও জমজমাট হয়ে ওঠে। চারদিকে ইচ্ছেমতো বেড়ানোর সুযোগে গ্রামবাংলা প্রকৃতপক্ষে শীতে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।
শীতের নির্জনতার মধ্যে নীরব অস্তিত্বের প্রকাশও সৌন্দর্যমন্ডিত। প্রতিটি ঋতুরই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। শীতের কর্মব্যস্ত দিনের সব কোলাহলকে আড়ালে করে যখন রাত গভীর থেকে গভীরতর হয়, তখনই খুঁজে পাওয়া যায় শীতের আসল রূপটি। এই রূপ তার নিজের চোখ দিয়ে হৃদয় দিয়ে একে অনুভবের ব্যাপার।
যা-ই হোক শীত আসছে, বারবার আসবে। ডুবিয়ে দেবে কুয়াশায়। বাজারে বাড়বে ভিড়, বদলে যাবে দিনের হিসাব, সাজ-পোশাক হবে তো বটেই।
কিন্তু তাদের কথা ভুলে গেলে চলবে না,যারা শীতের থাবায় রক্তাক্ত শরীর নিয়ে টিকে থাকে একটু একটু করে।
আমরা স্বপ্ন দেখব তেমন একটা শীতের, যে শীতে উত্তাপের অভাবে খারাপ যাবে না কোনো শিশু; বরং তারাও গাইবে গান “শীত তুমি আনন্দের”!
সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জীবনে শীত আসে অভিশাপ হয়ে। উপযুক্ত শীত বস্ত্রের অভাবে তারা মানবেতর জীবনযাপন করে। তাই মানবিক বা সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে আমাদেরকে তাদের কথাও ভাবতে হবে।