মিলন হোসেন নালিতাবাড়ী শেরপুর (নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি)
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় কাকরকান্দি ইউনিয়নে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবী করে ভোটার তালিকায় নিজের বাবার নামের স্থলে মুক্তিযোদ্ধার নাম বসিয়েছেন। দুই বোনের ভাতার তালিকায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদে আবেদনও করেছেন। ফলে প্রায় ছয়মাস যাবত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার দরিদ্র অসহায় দুই সন্তান বাবার ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের শালমারা গ্রামে।এদিকে পিতার মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পুনরায় পেতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খৃষ্টফার হিমেল রিছিলের কাছে অভিযোগের পর গণশুনানীতেও কোন সমাধান মেলেনি বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী দুই বোন রওশনারা বেগম (৫৬) ও জোছনারা বেগম (৫১)।ভুক্তভোগী পরিবার, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৬০ সালের দিকে উপজেলার মধ্যমকুড়া গ্রামের ইয়াজ উদ্দীনের সাথে বিয়ে হয় পিঠাপুনি গ্রামের আমেনা বেগমের। তাঁদের ঘরে জহুরা খাতুন ও সাহারা খাতুন নামের দুই কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। পরে ১৯৬৫ সালে ইয়াজ উদ্দীনের মৃত্যুর পর দুই মেয়েকে বাপের বাড়িতে রেখে আমেনা খাতুনের দ্বিতীয় বিয়ে হয় শালমারা গ্রামের হাবিল উদ্দীনের।পরে তাঁদের ঘরে রওশনারা বেগম ও জোছনারা বেগম নামে দুই কন্যা সন্তানের জন্ম হয়৷
এদিকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন হাবিল উদ্দীন। পরে ১৯৯৮ সালে তাঁর মৃত্যুর পর থেকেই স্ত্রী আমেনা বেগম ও দুই মেয়ে রওশনারা ও জোছনারা মুক্তিযোদ্ধার সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছিলেন।পরে গত ফেব্রুয়ারী মাসে আমেনা বেগমের মৃত্যুর পর পিতার নাম পরিবর্তন করে মুক্তিযোদ্ধা হাবিল উদ্দীনের নাম বসিয়ে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবী করেন। ভাতার তালিকায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদে আবেদনও করেন৷ এতে ছয়মাস যাবত মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পাচ্ছেন না দরিদ্র দুই বোন রওশনারা ও জোছনারা।ভুক্তভোগী রওশনারা বলেন, আমাদের দুই বোনেরই স্বামী মারা গেছে অনেকদিন আগেই৷ সরকারের দেওয়া ‘বীরনিবাস’ ঘরে আমরা বসবাস করি । মা অসুস্থ্ হয়ে ছয় বছর বিছানায় পইরা ছিলো, তখনও আমরা দুইবোনই সেবা করছি৷ হঠাৎ ভাতা বন্ধ হওয়ায় আমরা খুব কষ্টে আছি।ভুক্তভোগী জোছনারা বলেন, মা মারা যাওয়ার পর জহুরা নিজের বাবার নামের জায়গায় আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধার নাম বসাইয়া আবেদন করছে। এর পর থেকে আমাদের ভাতা বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে কোন সুরাহা না পাওয়ায় আমরা আদালতের মামলা করেছি।অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জহুরা বেগম বলেন, আমি ইয়াজ উদ্দীনকে চিনি না। আমি মুক্তিযোদ্ধা হাবিল উদ্দিনের সন্তান৷ ভোটার তালিকায় পিতার নাম পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোন নাম পরিবর্তন করি নাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাকরকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ(ইউ পি) চেয়ারম্যান মো.নিয়ামূল কাওছার বলেন,প্রকৃত সত্য হচ্ছে মরহুম বীরমুক্তিযোদ্ধা হাবিল উদ্দিনের দুই সন্তান জোছনারা ও রওশনারা। জহুরা বেগম মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে যে দাবী করছেন তা সঠিক নয়। মুক্তিযোদ্ধার দুই সন্তানকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রত্যয়ন পত্র দেওয়া হয়েছে।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের নালিতাবাড়ী শাখার ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান বলেন,মূলত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী এই ভাতা পেতেন। বিষয়টি তদন্ত করা হয়েছে। তবে মুক্তিযোদ্ধার দুই সন্তান রওশনারা ও জোছনারা আদালতে মামলা করেছেন। মামলার সিন্ধান অনুয়ায়ী পরবতীতে প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে ওই নারীর মৃত্যুর পর কোন সিদ্ধান্ত না আসায় কাওকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে না।জানতে চাইলে ইউএনও খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন,সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তের প্রতিবেদন অনুয়ায়ী গণশুনাণি করা হয় কিন্ত দুই পক্ষ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবী করায় বিষয়টি সুরাহা করা সম্ভব হয়নি।