পঁচিশ যেন জবির জন্য আশীর্বাদ 

আবুবকর সম্পদ, জবি প্রতিনিধিঃ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়(জবি) এর জন্য যেন পঁচিশ এসেছে আশীর্বাদ স্বরূপ। জবির সকল চাওয়াই যেন পূরণ করে দিচ্ছে পঁচিশ। যা পূরণ হয় নি জবির উনিশ বছর বয়সেও।

গত ৫ আগস্ট ২০২৪ স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর পদত্যাগ করেন স্বৈরাচারী সরকারের সমর্থক জবির সাবেক উপাচার্য সাদেকা হালিমের প্রশাসন। এর পর থেকে প্রতিটি দিনই যেন এসেছে জগন্নাথের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ হয়ে। পূর্বে ঢাবি থেকে সবসময় উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হলেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে জবি থেকেই উপাচার্য নিয়োগ দিতে বাধ্য হয় বর্তমান ইউনুস সরকার। ফলে জবি এগিয়ে যাবে তার নিজস্ব গতিতে শিক্ষার্থীদের এই আশার বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় খুব দ্রুত।

যার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান উপাচার্য ড. মোঃ রেজাউল করিমের নেতৃত্বে গঠিত জবি প্রশাসন শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক অধিকার নিয়ে নানামুখী উদ্যোগ নিতে থাকে। দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই প্রশাসন অতি দ্রুত ক্যাম্পাসের দ্বিতীয় ক্যাফেটেরিয়া নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সহায়তায় উদ্ধার করা হয় দখল থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ এবং বাণী ভবন ও ড. হাবিবুর রহমান দুইটি হল।

এর মধ্যেই দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তর ও শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা সমাধান করা ছিলো প্রশাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই এই চ্যালেঞ্জ কে সামনে নিয়ে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা সমাধানে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে। এপ্রিলের মধ্যেই চুক্তি মোতাবেক আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন প্রাথমিক ভাবে ৭০০ শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা সমাধান করবে বলে ঘোষণা দেয়।

কিছুদিনের মধ্যেই ঘোষণা আসে জবি শিক্ষার মান উন্নয়নের গুচ্ছ পদ্ধতিতে থেকে বের হয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে পরিক্ষা নিবে প্রশাসন। দ্রুতই এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয়া এবং জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারীর মধ্যে পরিক্ষা শেষ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে প্রশাসন।

অন্যদিকে বাণী ভবন ও ড.মোঃ হাবিবুর রহমান হলে দ্রুত অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করতে নিয়োগ দেওয়া হয় হল প্রভোস্ট। এর মধ্যেই প্রশাসন উদ্যোগ নেয় দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তর জন্য।কিন্তু বিগত প্রশাসনের দুর্নীতির জন্য আটকে যায় দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তর ও বাজেট।পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলন ও জবি প্রশাসনের হাড় ভাঙা পরিশ্রমে গত ১৫ জানুয়ারি (বুধবার) শিক্ষামন্ত্রণালয় সেনাবাহিনীর হাতে কাজ হস্তান্তর করার প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত রবিবার(১৯ জানুয়ারি) সেনাবাহিনীর ২৪ কনস্ট্রাকশন বিগ্রেডিয়ার দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং উক্ত কাজের জন্য সেনাবাহিনী থেকে নিয়োগ দেওয়া হয় পিডি।

জবির এসকল সাফল্যের জন্য শিক্ষার্থীরা মনে করে বর্তমান জবি প্রশাসন ও আন্দোলনকারীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

এ বিষয়ে একজন শিক্ষার্থী বলেন, আমরা জবিয়ানরা স্বৈরাচার হাসিনার আমলে সবসময়ই বঞ্চিত ছিলাম।  জবি প্রশাসন ঢাবি সিন্ডিকেটের হাতে বন্দী থাকতো।কিন্তু ২৪ এর ছাত্র আন্দোলনের পর স্বৈরাচার প্রশাসন পদত্যাগ করলে আমরাও আমাদের নায্য অধিকার নিয়ে কথা বলতে শুরু করি। ২৪ এর আন্দোলনে জবিয়ানরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। তাই আমাদের প্রতিও যাতে আর বৈষম্য না হয় এজন্য আমরা জবিয়ানরা সোচ্চার হয়ে উঠি। বর্তমান প্রশাসন আমাদের এই অধিকারগুলো আদায়ে অনেক সাহায্য করেছে। তাদের নাম জগন্নাথের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে।

এ বিষয়ে জবি উপাচার্য ড. রেজাউল করিম বলেন, আমাদের এই সকল সাফল্যের জন্য প্রথমেই আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি মহান আল্লাহর কাছে। বিগত সরকার আমাদের এই সমস্যাগুলো সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেয় নি।কিন্তু বর্তমান সরকার আমাদের শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো বুঝতে পেরেছে। তাই আমি তাদের কে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।তাদেরও আমি অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই এবং সকলের নিকট দোয়া চাই যেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কে দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর করতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *