মিলন হোসেন নিবিড়,নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রতিনিধিঃ
এক বছর প্রেম করে প্রেমিকের প্রলোভনে পড়ে শারিরিক সম্পর্ক গড়ে স্বজনদের হাতে ধরা পড়ে দু’জনই। এরপর প্রেমিক কিশোরীকে আশস্ত করেছিল বিয়ে করতে। পরদিন থেকেই লাপাত্তা হওয় প্রেমিক হান্নান। এরপর বিয়ের দাবীতে বাড়িতেও আশ্রয় মিলেনি প্রতারিত কিশোরীর। ফলে রাতভর বাড়ির উঠানে গাছের নিচে অন্ধকারে দাড়িয়েই কাটিয়েছে বিয়ের দাবীতে। ঘটনাটি ঘটেছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কালাকুমা গ্রামে।
জানা গেছে, কালাকুমা গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেনের কলেজ পড়ুয়া ছেলে আব্দুল হান্নান। তারই প্রতিবেশি জিন্নত আলীর সতেরো বছর বয়সী কিশোরী নাতীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে প্রায় এক বছর আগে। শৈশবে মায়ের সাথে ছাড়াছাড়ি হওয়ায় একমাত্র মেয়েকে নিয়ে মা ঢাকায় গার্মেন্টে কাজ করে কন্যাকে পড়াশোনা করাচ্ছিলেন। মাঝেমধ্যে নানাবাড়ি বেড়াতে আসার ফাঁকে কলেজ ছাত্র হান্নান তার সাথে সম্পর্ক করে। সবসময় ফোনে যোগাযোগ থাকলেও মাঝেমধ্যে নানা বাড়ি বেড়াতে এলে দেখাসাক্ষাত হতো তাদের। গত ২২ অক্টোবর রোববার তাদের দেখা হয় ভিন্ন আমেজে। নানী তার বাবার বাড়ি আর নানা মোড়ের দোকানে আড্ডা দিতে যাওয়ায় বাড়িটি ছিল ফাঁকা। এ সুযোগে রাত দশটা থেকে এগারোটা পর্যন্ত কিশোরীর সাথে প্রেমলীলায় মেতে ওঠে হান্নান। প্রেমলীলা শেষে যখন দু’জন রোমাঞ্চে ব্যস্ত তখন ঘরে এসে হাজির হন বৃদ্ধ নানা জিন্নত আলী। প্রথমে কাথার নিচে লুকানোর চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। ফলে নিজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন আর স্যান্ডেল রেখেই জিন্নত আলীকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে পালায় প্রেমিক আব্দুল হান্নান।
রাতেই এ নিয়ে আশপাশে হৈচে শুরু হলে হান্নানের বড় ভাই আব্দুল হালিম পরদিন বিয়ে করিয়ে বিষয়টি মিমাংসার সিদ্ধান্ত জানান। কিন্তু সোমবার দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়। বিয়ের কোন আয়োজন নেই। উপরন্তু ছোট ভাই হান্নানকে লুকিয়ে টালবাহানা শুরু করে।
এদিকে হালিমের কথায় আশ^স্ত হয়ে কিশোরীর মা ঢাকা থেকে বাড়ি আসেন। অপেক্ষা করেন দিনভর। রাতের অন্ধকার নামলে সম্মান হারানো কিশোরী হতাশায় অবস্থান নেয় হান্নানের বাড়িতে। বারবার তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও অন্ধকারে রাতভর দাড়িয়ে থাকে প্রেমিকের অপেক্ষায়।
মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত প্রেমিকের দেখা নেই। বাড়ির লোকজনও মেনে নিতে নারাজ। উপরন্তু কিশোরীর ঘরে রেখে আসা মোবাইলের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকে।
ভুক্তভোগী কিশোরী জানায়, অনেক বারণ করার পরও তার সাথে সম্পর্ক গড়তে পিড়াপিতি করে হান্নান। একপর্যায়ে তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। রোববার রাতের বেলায় বাড়িতে কেউ না থাকায় হান্নান জোর করে করে ঢুকে। তারপর দরজা আটকে দিয়ে তার সাথে বিছানায় গড়ায়।
নানা জিন্নত আলী জানান, তিনি ঘরে এসে দু’জনকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। এসময় হান্নান তাকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে পালায়। তবে পালিয়ে যাওয়ার সময় তার মোবাইল ফোন ও পায়ের স্যান্ডেল রেখে যায়।
আরেক নানা নজরুল ইসলাম জানান, রাতে ঘটনা শোনে আমরা আসি। এ নিয়ে হান্নানের স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করলে তার বড় ভাই হালিম সোমবার দু’জনকে বিয়ে দেবে বলে সমাধান দেন। সোমবার হান্নানকে বাড়ি থেকে পাঠিয়ে দিয়ে তার স্বজনেরা পল্টি মারে।
কিশোরীর মা আলেছা বেগম জানান, ওরা আমার মেয়েরে সম্মান নিয়ে খেলা করেছে। এখন সম্পর্ক মেনে নিতে চায় না। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এমতাবস্থায় প্রেমের ফাঁদে ফেলে কিশোরীর সর্বস্ব কেড়ে নেওয়ায় কথিত প্রেমিক আব্দুল হান্নান ও হান্নানকে সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে বিচারের দাবী সংশ্লিষ্টদের।
এ বিষয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক ভুক্তভোগী পক্ষের অভিযোগসাপেক্ষে মামলা ও পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন।