“নাকচাবি মুখ” মোঃ ওবায়দুর রহমান

 

হারুন শেখ স্টাফ রিপোর্টার বাগেরহাট জেলা।।

তোমার কথার মাঝে ভালোবাসার সুতীব্র একটা ঘ্রাণ ছিল। তাপিত গ্রীষ্মের গৈরিক সন্ধ্যায়; বাড়ির আঙিনায় শরিফা ফলের পরাগ রেণু থেকে যেমন একটা মিষ্টি মধুর গন্ধ ছড়ায়। অগ্রহায়ণ মাসে দেবকাঞ্চন ফুলের গায়ে শুভ্র শিশির কণারা যেমন জড়িয়ে থাকে, তোমার কথার মাঝে কী যেন একটা মায়া ছিল৷ মন চাই, জিয়ল গাছের আঁঠার মত সেই মায়ার সাথে লেপ্টে থাকি সারাজীবন ধরে। আর তোমার চোখের তারায় যে প্রেমের আস্কারা ছিল৷ বাতাসের আস্কারা পেয়ে শিমুল তুলোরা যেমন নাচানাচি করে৷ আমারও তেমনি ইচ্ছে করে, সমর্পনের স্রোতে ভেসে চলে যাই- মারিয়ানা ট্রেঞ্চের অতলান্তিক প্রেম গভীরতায় গিয়ে হাবুডুবু খাই।

মনে আছে, একদিন পৌষের সকালে পৌরুষদীপ্ত শীতের স্ব-পুংষক থাবায় রৌদ্রচ্ছটা কেমন নিভে নিভে যায়৷ গনগনে সূর্য যখন স্নান সেরে নেয় ঘনকুয়াশায়, তখন ছাতিম গাছের শাখায় বসে দু’টি সফেদ খরগোস পরম আদরে গতরে গতর পোহায়। তাদের উষ্ণতায় সেদিন গমগমে ওঁমে ভরে উঠেছিল তোমাদের বাড়ির শীতার্ত উঠোন৷ আর সেই উঠোনে দাঁড়িয়ে বুকে হাত বাধা এক প্রেমার্ত কিশোর তোমার নাকচাবি মুখের হাসিতে মজে বলেছিল- ভালোবাসি তোমায় সোনাঝরা রোদের মত আমি যে কত…

তারপর একসাথে দু’জনের ভালোবাসার খোশমেজাজে পড়ে কথারা হয়েছে খোশ গল্প৷ তারাঝরা ফুলের মত থোকায় থোকায় তোমার-আমার কথার গল্পে ভরে গেছে মাঠ, ঘাসের জমিন, অজস্র প্রহর৷ হাত ধরাধরি করা কতশত বিকেল জানে সেই কথাদের খবর৷

এরপর এলো এক অবেলার ডাক,
সব কথা হয়ে গেল হঠাৎ হাইজ্যাক৷

তাইতো, আজকাল তোমার কথার মাঝে
ছিঁড়ে যাওয়া গিটারের ঝনঝনে সুর ভাজে!

…হাইতনে বসে তুমি উদাসী চোখে,
কার পানে চেয়ে থাকো আমাকে রেখে!

কিন্ত কেন?
কী করেছি আমি?

একদিন তুমি আমার উপন্যাসের নায়িকা হতে চেয়েছিলে। আমি জলরং প্রচ্ছদে এঁকেছি তোমার নাকচাবি মুখ। মলাটের ভিতরে সাজিয়েছি কালো-কালো অক্ষরে হৃদয়ের সুখ৷

ভালোবাসা আসলে খুলে খুলে পাঠ করতে হয়, যত্ন-আত্মি করে হৃদয়ের তাকে-তাকে তাকে সাজিয়ে রাখতে হয়৷ কিন্তু, কেন যেন তুমি আমার অপঠিত বইয়ের মতই রয়ে গেলে৷ তোমাকে আমার খুলে খুলে পাঠ করা হলো না আর কোনোকালে!

আমি আজো সেই নাকচাবি মুখ দেখার আশায়, তোমার বাড়ির পথের পাশে সকাল-সন্ধ্যায় উঁকি দিয়ে যাই…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *