মোঃ সারোয়ার হোসেন অপু
স্টাফ রিপোর্টারঃ
উত্তরবঙ্গের কৃতি সন্তান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বাংলাদেশ আ’লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী প্রয়াত আব্দুল জলিলের আসন হচ্ছে নওগাঁ-৫ (সদর) আসন। একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩৪২৯২৫ জন। তার মধ্যে পুরুষ ১৭১৫৫৫ জন এবং নারী ১৭১৩৭০ জন।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নওগাঁ-৫ (সদর) আসনের প্রার্থীদের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। যে যার মতো সমর্থিত নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী গণসংযোগ, শোভাযাত্রা ও উঠান বৈঠক অব্যাহত রাখার মাধ্যমে নির্বাচনী মাঠ গরম করার কাজ করছেন। এই আসনে আ’লীগ এবং বিএনপিতে আছে হাফ ডজন করে মনোনয়ন প্রত্যাশী। নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশগ্রহণ করে সেক্ষেত্রে আ’লীগের প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল হলে আবারও বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আসনটি চলে যাবে বিএনপির ঘরে এমনটিই মনে করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা।
সূত্রে জানা, ১৯৯১ এবং ‘৯৬ সালে এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে বিজয়ী হন প্রয়াত শামসুদ্দিন আহমেদ। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন প্রয়াত আ’লীগ নেতা আব্দুল জলিল। এরপর ২০০১ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই আসনের এমপি ছিলেন উত্তরবঙ্গের সিংহ পুরুষ আব্দুল জলিল। ২০১৩সালে ৬মার্চ সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আব্দুল জলিল। তার অবতর্মানে জেলা আ’লীগের হাল ধরেন সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক। সে সময় দলকে সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখেন তিনি। যার ফলে উপ-নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আব্দুল মালেক প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতিক নিয়ে জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম রফিককে হারিয়ে আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দলে বিভেদের কারণে ২০১৮সালে প্রয়াত আব্দুল জলিলের ছেলে ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জনকে নৌকা প্রতিক দিলে আব্দুল জলিলের প্রতি মানুষের ভালোবাসার বহি:প্রকাশ হিসেবে বিপুল ভোটে জন এমপি নির্বাচিত হন। এরপর দলের সিনিয়র, ত্যাগী ও কর্মীবান্ধব নেতাদের মূল্যায়ন না করার কারণে দলের মাঝে বিভক্তের সৃষ্টি হয়। ফলে বর্তমান এমপি থেকে অনেক নেতারা দূরে রয়েছেন। কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন অনেক নেতাকর্মী। বর্তমান এমপি জন বাবার মতো দলকে তেমন সুসংগঠিত করতে পারেননি বলে ত্যাগী নেতাকর্মীরাসহ সচেতনমহল মনে করছেন। যার ফলে দিনের পর দিন দলের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। আর এই কারণেই এবার মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জোরেশোরে প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।
আর সাধারণ ভোটারদের চাওয়া অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন। যার ভোট সে যেন একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে আবার বাড়ি ফিরে আসতে পারে এমন পরিবেশ দাবী সাধারণ মানুষদের। আগামীতে যে ব্যক্তিই এমপি নির্বাচিত হোন না কেন তিনি যেন সময়ের সঙ্গে এই শহরটাকে যানজট মুক্ত আধুনিকায়ন করার একটি সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে যন্ত্রনার শহর থেকে নওগাঁবাসীকে মুক্তি দিয়ে প্রাণখোলা সুস্থ একটি শহর বিনির্মাণ করবে। শহরে ছেলেদের একাধিক সরকারি বিদ্যাপিঠ থাকলেও মেয়েদের নেই, যার কারণে অনেক মেয়েদের মেধা থাকলেও প্রতিষ্ঠানের অভাবে সরকারি ভালো বিদ্যাপিঠে অধ্যায়ন করা হচ্ছে না। তাই আগামীতে যিনি এমপি নির্বাচিত হবেন তার কাছে এই জনগুরুত্বপূর্ণ সমস্যাটি সমাধানে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এমনটিই আশা নওগাঁবাসীর।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে বর্তমান সাংসদ ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জনের পাশাপাশি নওগাঁ পৌর আ’লীগের সভাপতি দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষাণ, জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি শাহিন মনোয়ারা হক, সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. রফিকুল ইসলাম রফিক ও জেলা যুবলীগের সভাপতি খোদাদাদ খান পিটুর নাম শোনা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেকেই নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নির্বাচনের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এছাড়া শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকলে জেলা আ’লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেকও নৌকার মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানা গেছে।
অপরদিকে বিএনপি রয়েছে তাদের একদফা দাবী আদায়ের আন্দোলনে। যদি নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করে তাহলে এই আসন থেকে অনেকেই মনোনয়ন চাইতে পারেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য লে. কর্ণেল (অব.) আব্দুল লতিফ খান, জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও নওগাঁ পৌর মেয়র আলহাজ্ব নজমুল হক সনি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন পলাশ এবং বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মামুনুর রহমান রিপন। এছাড়াও এই আসন থেকে জেলা জাতীয় পার্টি, জাসদের (ইনু) পক্ষ থেকেও অনেকেই মনোনয়ন চাইতে পারেন।