মোঃ সারোয়ার হোসেন অপু
স্টাফ রিপোর্টারঃ
নওগাঁয় গত কয়েকদিনের লাগাতার ভারী বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে এই ভারী বৃষ্টিতে কাঁচা মরিচ, পটল, করলাসহ বিভিন্ন সবজির ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। নওগাঁর বদলগাছী কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান গত ২৪ঘন্টায় নওগাঁ ও তার আশেপাশের অঞ্চলে ৩০মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এই বিরামহীন বৃষ্টিপাত আগামী তিনদিন অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তিনি জানান।
গত সোমবার (০৩অক্টোবর) থেকে চলা বিরামহীন বৃষ্টিতে জেলার রাণীনগর, সদর উপজেলা ও বদলগাছীসহ বিভিন্ন উপজেলায় জমিতে থাকা কাঁচা মরিচ, পটল, করলা ও শীতের আগাম সবজির ক্ষেতে পানি জমে থাকার কারণে ব্যাপক ভাবে ফলন বিপর্যয়সহ ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া গাছের গোড়ায় বৃষ্টির পানি জমে থাকার কারণে গাছ মরে যাচ্ছে। ফলে বাজারে প্রতিটি সবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষকরা আগাম আলুর বীজ বোপন করাসহ শীতের বিভিন্ন সবজি চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করতে পারছেন না। আবার অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে আমন ধানেরও ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এছাড়া বিরামহীন বৃষ্টিতে কাজে যেতে না পারার কারণে খেটে খাওয়া ও দিনমজুর শ্রেণির মানুষরা পড়েছেন চরম বেকায়দায়। বিশেষ করে ছিন্নমূল মানুষরা পড়েছেন চরম বিপাকে। অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাহিরে বের না হওয়ায় যাত্রী মিলছে না ভ্যান, রিক্সা ও অটোরিক্সায়।
অপরদিকে জেলার রাণীনগর, আত্রাই ও মান্দা উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকায় নতুন করে বেড়েছে দুর্ভোগ। গত কয়েকদিন নদীর পানি কমার ফলে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও নতুন করে লাগাতার কয়েকদিনের আকাশের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে আবারো বাড়তে শুরু করেছে নদীর পানি। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে নতুন করে পানি প্রবেশ করায় বাড়ছে বানভাসী মানুষদের দুর্ভোগ। চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধগুলো মেরামতের কাজ।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল বলেন বৃষ্টি শুরুর আগের কয়েকদিন নদীর পানি উল্লেখ্যযোগ্যহারে কমার ফলে বন্যা পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছিলো। প্রধান দুটি নদীর পানি বিপদসীমার প্রায় ১শ সেমি নিচ দিয়ে ছিলো। কিন্তু গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া বিরামহীন আকাশের বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে প্রতিনিয়তই আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীর পানি। এতে নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন তিস্তার পানি যমুনা নদীতে পতিত হয়ে কিছু শাখা নদী দিয়ে আত্রাই নদীতে পতিত হতে পারে। আবার ছোট যমুনা নদীটি দিনাজপুরের বড়চন্ডিপুর নিম্ম জলাশয় থেকে উৎপন্ন হওয়ার কারণে এই নদীতে বৃষ্টিপাত বেশী প্রভাব ফেলতে পারে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত আত্রাই নদীর শিমুলতলী পয়েন্টে ৩৮সেমি, মহাদেবপুর পয়েন্টে ৩৩সেমি, মান্দা উপজেলার জোতবাজার পয়েন্টে ২০সেমি, আত্রাই উপজেলার রেলওয়ে স্টেশন পয়েন্টে ১৪সেমি পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সকল পয়েন্টেই পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ছোট যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে লিটন ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৫সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই ধরনের বিরামহীন বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।