মোঃ সারোয়ার হোসেন অপু,
স্টাফ রিপোর্টারঃ
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নওগাঁয় ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙ্গনের ফলে পানিতে ভাসছে শতাধিক গ্রামের মানুষ। পানিতে ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার বিঘা জমির আউশ ও আমন ধানের খেত। তবে আকাশের বৃষ্টি না থাকায় নদীর পানি কমতে শুরু করায় নতুন করে ভাঙ্গনের হাত থেকে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে নদীর তীরবর্তি মানুষদের ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
গত বুধবার রাণীনগরের ছোট যমুনা নদীর নান্দাইবাড়ি ও কৃষ্ণপুর নামক স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে পানির চাপে ভেঙ্গে গেছে নান্দাইবাড়ি নামক স্থানের বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ফলে আত্রাই-নাটোর ও নওগাঁর সঙ্গে বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া নান্দাইবাড়ি, কৃষ্ণপুর, মালঞ্চিসহ ওই এলাহার প্রায় ৮গ্রামের মানুষ বর্তমানে পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।
অপরদিকে গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার আত্রাই উপজেলার কাশিয়াবাড়ি-কালীগঞ্জ সড়কের বলরামচক নামক স্থানে, আত্রাই-সিংড়া সড়কের জগদাস নামক স্থানে ও পাশাপাশি শিকারপুর নামক স্থানের বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টি ইউনিয়নের প্রায় ৮০টি গ্রাম বর্তমানে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া আত্রাই-বান্দাইখাড়া সড়কের নন্দলালী নামক স্থানে ভেঙ্গে যাওয়া বেরিবাঁধের অংশটুকু বন্ধ করায় রক্ষা পেয়েছে ওই এলাকার অনেক গ্রামের মানুষ।
গত বৃহস্পতিবার ভাঙ্গা স্থানগুলো স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো: আমিরুল হক ভ’ঞাসহ অন্যান্য উর্দ্ধতন কর্তকর্তারা দুই উপজেলার ভাঙ্গন এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা হিসেবে সাংসদ আনোয়ার হোসেন হেলাল চাল বিতরণ করেছেন। সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসানের পক্ষ থেকেও ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের তালিকা করা হচ্ছে।
অপরদিকে মান্দা উপজেলায় বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের ৭টি গ্রাম। এ ইউনিয়নের নুরুল্লাবাদ ও পারনুরুল্লাবাদ এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ৪শ পরিবার এবং ফকিন্নি নদীর তীরবর্তী এলাকায় আরও অন্তত ৬শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া প্রসাদপুর ইউনিয়নের বাইবুল্যা ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কয়লাবাড়ী এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫শ পরিবার। এছাড়া দীর্ঘদিন যাবত নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধ সংস্কার না করার কারণে বেশকিছু অংশ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল জানান, শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত ছোট যমুনা নদীর লিটন ব্রীজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৭সেমি, জোতবাজার পয়েন্টে বিপদসীমার ২৮সেমি ও রেলস্টেশন পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫সেমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি কমতে শুরু করায় নতুন করে আর কোথাও ভেঙ্গে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। সবার সহযোগিতা নিয়ে ভেঙ্গে যাওয়া অংশে জিওব্যাগ ও বালির বস্তা দিয়ে বন্ধ করার কাজ চলমান রয়েছে বলেও তিনি জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো: আমিরুল হক ভ’ঞা বলেন পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থানীয় বাসিন্দা, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ভেঙ্গে যাওয়া অংশগুলো বন্ধ করার কাজ চলমান রয়েছে। আমরা আশাবাদি নদীতে পানি কমতে শুরু করায় আর তেমন কোন ভয়ের কারণ নেই। এলাকার মানুষদের রক্ষা করতে সরকারের পক্ষ থেকে সকল ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পরবর্তিতে ভেঙ্গে যাওয়া অংশগুলো স্থায়ীভাবে মেরামত করার প্রতি সুদৃষ্টি দিতে সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সাংসদ আলহাজ্ব মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন প্রাকৃতিক দুর্যোগে কারো হাত নেই। তবে পূর্ব থেকে প্রতিরোধের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। তবেই দুর্যোগে ক্ষতি হবে কম। বন্যাও একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বন্যা নামক এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাঁধ ভেঙ্গে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আত্রাই উপজেলা। ভেঙ্গে যাওয়া অংশগুলো বন্ধ করতে স্থানীয়দের সঙ্গে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় ও উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতা প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। এই কার্যক্রম চলমান থাকবে বলেও তিনি জানান।