শহিদুল ইসলাম : ধনবাড়ী প্রতিনিধি
টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলায় FAO অর্থায়নে ,কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর সহযোগীতায় ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্যোগে বালাইনাশক বিক্রেতা, কোম্পানী প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি ও ডিএই কর্মকর্তাদের নিয়ে বালাইনাশকের নিরাপদ ব্যবহার ও ঝুঁকি হ্রাসের উপায় বিষয়ক কৃষকদের নিয়ে সচেতনতামূলক এক আলোচনা সভা ধনবাড়ী উপজেলার হল রুমে অনুষ্ঠিত হয়।
ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মাসুদুর রহমান এর সভাপতিত্বে, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মোঃ ফরিদুল হাসান, অতিরিক্ত পরিচালক, (বালাইনাশক প্রশাসন ও মান নিয়ন্ত্রণ) উদ্ভিদ সংরক্ষন উইং, খামারবাড়ী ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,
মোঃ সাজ্জাত হোসেন তালুকদার- অতিরিক্ত উপ পরিচালক, ডিএই, টাঙ্গাইল,
মোঃ শাহীন আলম পেস্ট কন্ট্রোল অফিসার, মোঃ মাজেদুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার, ধনবাড়ী, টাঙ্গাইল, আজিজা আক্তার, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার, ধনবাড়ী, টাঙ্গাইল।
আরো উপস্থিত ছিলেন, উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বৃন্দ, উপজেলার সার ও কীটনাশক বিক্রেতায় জড়িত ডিলার বৃন্দ এবং বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির প্রতিনিধি।
প্রধান অতিথি অতিরিক্ত পরিচালক
মোঃ ফরিদুল হাসান স্বাগত বক্তব্যে উপস্থিত কৃষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, বালাইনাশক হচ্ছে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যা ফসলের ক্ষতিকর পোকা মাকড়, রোগ, আগাছা ইত্যাদি বালাই দমনের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এজন্য কৃষকরা বালাই দমনের জন্যে বালাইনাশক ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, বালাইনাশকের অনেক রকম মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। যেমন- কীটনাশক শুধু ক্ষতিকর পোকা মাকড় মারে না, এর ব্যবহারে উপকারী পোকা ও মাকড়সাও মারা যায়। এছাড়া বালাইনাশক মানুষের জন্যেও নিরাপদ নয়। এসব রাসায়নিক পদার্থ মানুষকে রোগাক্রান্ত করে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। বালাইনাশকের বিষাক্ততার কিছু অংশ উৎপাদিত ফসল ও খাদ্যের মধ্যে থেকে যায়। এছাড়া বালাইনাশকের দ্বারা পুকুর ও নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে জলজ প্রাণীর জন্য হুমকি সৃষ্টি করে। বাতাস দূষিত করে। মাটির অনুজৈবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটায়।
বালাইনাশক ব্যবহারের পূর্ব, সঠিক বালাইনাশক নির্বাচন, তীব্র বিষ পরিহার, মেয়াদ উত্তীর্ণ বালাইনাশক না কেনা ও ব্যবহার না করা, খাদ্যদ্রব্যের সাথে বালাইনাশক বহন না করা। ভাঙ্গা/ খোলা বালাইনাশক কেনা যাবে না। বালাইনাশক নিরাপদ স্থানে শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা। ব্যবহারের সময় সতর্কতা বোতলের গায়ে লিখিত তথ্য/লেবেল পড়া, উপযুক্ত পোষাক পরা শিশু ও গবাদিপশু হাঁস-মুরগি দূরে রাখা। খুলে গন্ধ না শোকা, মাত্রা মতো মিশানো।
বালাইনাশক ব্যবহারের সময় , ছিটানো/ব্যবহারের সময় ফুটো/ভাঙ্গা স্প্রেয়ার ব্যবহার না করা। মুখ দিয়ে বোতল না খোলা। খালি গায়ে স্প্রে না করা। খালি পেটে স্প্রে না করা। বাতাসের বিপরীতে না ছিটানো, স্প্রের সময় কিছু না খাওয়া। প্রখর রৌদ্রে স্প্রে না করা।বৃষ্টির পূর্বে এবং পরে স্প্রে না করা।
বালাইনাশক ব্যবহারের পর খালি বোতল/ অবশিষ্ট বালাইনাশক মাটিতে পুঁতে ফেলা, তোলা পানি দিয়ে অথবা টিউবওয়েলের পাশে স্প্রে মেশিন ভাল করে ধুয়ে রাখা, নিজে সাবান দিয়ে ভাল করে গোসল করা, ব্যবহারকালীন পোষাক ধুয়ে ফেলা, অবশিষ্ট বালাইনাশক নিরাপদ স্থানে রাখা,
বালাইনাশক ব্যবহারের ফলে পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব বালাইয়ের বালাইনাশকের প্রতি সহনশীলতা বৃদ্ধি পায়। মানব স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়।গবাদিপশু হাঁস মুরগি ও মাছের ক্ষতি হয়।উপকারী পোকা মাকড় ও জীব মারা যায়। পোকামাকড়ের পুনরুৎপত্তি হয়। মাটির অণুজীব মারা যায়। খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়, দূষিত হয়। বালাইনাশকের অবশেষ ক্রিয়া দীর্ঘদিন থাকে।
বালাইনাশকের ক্রিয়ায় আক্রান্ত মানুষের মাথা ঘোরা, ঘাম হওয়া, শ্বাস কষ্ট, দম বন্ধ হয়ে আসা, চোখ পিট পিট করা, চোখ থেকে পানি পড়া, রক্ত স্বল্পতা, ঝাপসা দেখা, লালা ঝরা, দ্রুত হৃৎকম্পন, উচ্চ রক্তচাপ, বমি হওয়া, ডায়ারিয়া, হাত পা ঝিন ঝিন করা, মাংস পেশীর টান, হাত পা ভেঙ্গে আসা, অজ্ঞান ও পরিশেষে মৃত্যু।
আইপিএমের আলোকে ফসলের, বসতবাড়ির সবজির ও ক্ষতিকর পোকা ও রোগর ব্যবস্থাপনা নিলে বালাইয়ের আক্রমন হার সর্বনিম্ন থাকে এবং ফসলের উৎপাদন আর্থিকভাবে ক্ষতিকর হয় না এবং নিরাপদ কৃষি উৎপাদন সম্ভব।
আলোচনা শেষে তিনি কৃষকদের বালাইনাশকের ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বনের আহবান জানান।