ফিরোজ রহমান স্টাফ রিপোর্টার :
টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে মেহেরপুরের কলা চাষিরা। সোমবারও (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেও জেলার বিভিন্ন এলাকায় থেমে থেমে বৃষ্টি সঙ্গে দমকা বাতাস। আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস (চুয়াডাঙ্গা) সুত্রে জানা গেছে গত ২৪ ঘন্টায় ১০৮ মিলি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে, যা এবছরের সর্বোচ্চ। মাঠের অধিকাংশ এলাকার ফসল তলিয়ে গেছে পানির নিচে। মাটি নরম হয়ে যাওয়ার ফলে ঝোড়ো বাতাসে উপড়ে গেছে অধিকাংশ কলার গাছ, ভেঙে গেছে কলা কাদি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে চলতি মৌসুমে মেহেরপুর জেলায় মোট কলা আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে। বর্তমান দাম অনুযায়ী যার দাম প্রায় ১৮০ কোটি টাকা। কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক হিসাব এখনো না থাকলেও ক্ষতির পরিমান আবাদের প্রায় অর্ধেক বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ।
বিভিন্ন এলাকা থেকে নেওয়া তথ্য অনুযায়ী মেহেরপুর সদরের রাধাকান্তপুর, রাজাপুর, শালিকা, বাড়িবাকা, বাজিতপুর, বন্দর, চকশ্যামনগর, মুজিবনগর উপজেলার দারিয়াপুর, মানিকনগর, আনন্দবাস, রতনপুর ও গাংনী উপজেলার সাহারবাটি, কাথুলি, কাজিপুর এলাকায় কলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকার চাষিরা জানান, এলোমেলো বাতাসের ঝাপটায় খুটি দিয়েও রক্ষা করা যায়নি গাছ। টানা বৃষ্টিতে মাটি নরম হয়ে মাটিসহ উপড়িয়ে গেছে গাছ। কোন গাছ ভেঙেছে মাঝ থেকে।
সদর উপজেলার রাধাকান্তপুর গ্রামের কলা চাষি হামিদুল ইসলাম জানান, তিন বিঘার কলার মধ্যে অধিকাংশ গাছই উপড়িয়ে গেছে। কিছু গাছ মাঝ থেকে ভেঙে গেছে। কদিন পরেই কলা গুলো বিক্রি করা হতো।
রাজাপুরের আসাদুল জানান, প্রায় ১০ বিঘা কলার মধ্যে বেশির গাছ পড়ে গেছে। কিছু কলা বিক্রি হয়েছে আর বাকি গুলো বিক্রির অপেক্ষায় ছিলাম। কদিন আগেও প্রতি কাদি ৩শ টাকা করে বিক্রি করেছি৷ আর এখন গাছ পড়ে যাওয়ায় দাম অর্ধেকও পাবো কিনা জানিনা।
মুজিবনগর উপজেলার মানিকনগর গ্রামের জাহিদ হাসান জানান, হাটু পানিতে ডুবে গেছে কলার গাছ। প্রায় সব গাছই হেলে পড়েছে। কাদি সবেমাত্র ধরতে শুরু করেছে। এখন আর হয়তো কাদিগুলো পাওয়া যাবে না।
গাংনী সাহারবাটি গ্রামের কলা চাষি আক্তারুজ্জামান জানান, গতবার ভালো টাকা হওয়ায় এবার জমি লিজ নিয়ে সাড়ে ৫ বিঘা কলার চাষ করেছিলাম। আবহাওয়ার খামখেয়ালিতে বেশির ভাগ গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। জমির কলা গুলো আজকালে বিক্রি করা যেতে। দামও ছিল বেশ ভালো। কিন্তু এখন আর আগের দাম পাওয়া যাবে না। কলা চাষে এবার ব্যাপক লোকসান।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, গত বারের তুলান এবার কলার আবাদ হয়েছে প্রায় ৮শ হেক্টর বেশি। কিন্তু বিরুপ আবহাওয়ার কারনে কলার কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি নিরুপনের কাজ চলছে। যে গুলো অক্ষত আছে সে গাছ গুলোকে খুটি ও রশি দিয়ে একটির সাথে আরেকটি এভাবে পুরো জমি বেধে দিলে আর ক্ষতির সম্ভাবনা কম হবে।