ঝালকাঠি প্রতিনিধি মোঃ আরমান সরদার:
নিষেধাজ্ঞা আসার খবর পেয়ে মা ইলিশ নিধনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কিছু অসাধু জেলে। ঝালকাঠি জেলার চার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এসব অসাধু জেলেরা নতুন নতুন একাধিক নৌকা ও কারেন্ট জাল সংগ্রহ করা শুরু করেছেন। কেউ কেউ আবার পুরনো জাল ও নৌকা মেরামত করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গত মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মা ইলিশ সংরক্ষণ টাস্কফোর্সের মতবিনিময় সভায় বক্তারা বিষয়টি তুলে ধরেছেন। এসময় তারা বলেন, মৌসুমি জেলেদের কারনে নিষেধাজ্ঞা শতভাগ কার্যকর করা হয় না। তারা অন্যান্য পেশায় থাকলেও নিষেধাজ্ঞার মৌসুমে তারা ইলিশ মাছ শিকারে তাৎপর হন। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর মা ইলিশ ধরার উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা আসছে। মূলত বছরের এই সময়ে সাগরের ডিমওয়ালা ইলিশ সাধু পানিতে ডিম ছাড়ার জন্য বিভিন্ন নদ নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে প্রবেশ করতে থাকে। ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এই সময়ে সরকার ইলিশ মাছ শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে। জেলায় নিবন্ধিত মৎস্য জেলে ৪৫৮৬জন রয়েছে। তবে এবছর ৩৭৫৭ জন জেলের জন্য চাল ৯৩. ৯৩ মেট্রিট টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জন প্রতি ২৫ কেজি করে চাল পাবে। ইতোমধ্যে উপজেলার অনেক ইউনিয়নে জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার হদুয়া, খোঁজাখালী, অনুরাগ, মগড়, চর বহরমপুর, বাদুরতলা, বড়ইয়া, চরপালট, এলাকার কিছু অসাধু জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ নিধনের সকল আয়োজন সম্পন্ন করে রেখেছেন। তারা একাধিক কারেন্ট জাল ও দুই/তিনটি করে নৌকা সংগ্রহ করেছেন। এদের মধ্যে বিশাল একটা অংশ আছে যারা মৌসুমি জেলে। যারা সারাবছর অন্য পেশায় নিয়োজিত থাকলেও মা ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় নদীতে দাপিয়ে বেড়ান। যার কারণে প্রশাসনকেও নিষেধাজ্ঞা সফল করতে বেগ পেতে হয়। হান্নান চৌধুুরি নামের এক মৌসুমি জেলে বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় এক ঘন্টা ঠিকমত নদীতে জাল ফেলতে পারলে ৮-১০হাজার টাকা আয় করা যায়। কারণ নিষেধাজ্ঞার সময় নদীতে প্রচুর ইলিশ মাছ পাওয়া যায় আর ডিমওয়ালা হওয়ার কারণে ভালো দামে বিক্রি করা যায়। তাই অনেকেই এই লোভে পরে মা ইলিশ শিকারে নেমে পরে । যদি প্রশাসন জাল ও নৌকা নিয়েও যায় তাতে তেমন সমস্যা হয় না। আবার অনেকে মাছ বিক্রি না করে ককশিট ক্রয় করে তার ভিতর বরফ দিয়ে মজুদ করে রাখেন। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হলে তা বাজারে বিক্রি করা হয়। একটা বিষয় খেয়াল করে দেখবেন প্রতিবছরই নিষেধাজ্ঞার পরেরদিনই বাজারে ইলিশ মাছে সয়লাব হয়ে যায়। এগুলো আসে মূলত মজুদ করা মাছ থেকেই কারণ নিষেধাজ্ঞা শেষেই এত মাছ তো আর একদিনে জেলেরা ধরতে পারে না। নিবন্ধিত জেলে মো. হেলাল হাওলাদার বলেন, মা ইলিশ শিকারে যে সকল অসাধু জেলে নদীতে নামেন তাদের মধ্যে বড় একটা অংশ থাকে মৌসুমি জেলে যারা মূলত জেলে পেশায় নিয়োজিত না। যারা নিবন্ধিত জেলে তারা বেশিরভাগই ঝুঁকি নিয়ে নদীতে নামতে চান না। কারণ প্রশাসন ধরে সাজা দিলে জেলে কার্ডটি বাতিল হতে পারে। এছাড়া নিষেধাজ্ঞায় মাছ ধরা থেকে বিরত থাকার জন্য নিবন্ধিত জেলেদের সরকারের পক্ষ থেকে চাল বিতরণ করা হয়। তাই আমাদের উচিত নিষেধাজ্ঞায় মা ইলিশ নিধন না করে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করা।
স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর ইলিশ রক্ষার অভিযানের সময় মৌসুমী জেলেরা দলে দলে নদীতে জাল নিয়ে নেমে পড়েন। এরা প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে নদীতে মা ইলিশ শিকার করেন। অনেক সময় দেখা যায় প্রশাসনের লোকজন নদীতে ধাওয়া দিয়ে একবাক থেকে অন্য বাকে যেতে না যেতেই তারা আবার নদীতে নেমে পড়েন। এদের প্রতিহত করতে না পারলে মা ইলিশ রক্ষার অভিযানও সফল হবে না আর ইলিশ সম্পদেরও উৎপাদন বাড়বে না। ঝালকাঠি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় সরকার বদ্ধ পরিকর। নিবন্ধিত জেলেদের ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকার জন্য নানান ভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। তারপরও যারা ইলিশ শিকারে নদীতে নামবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রকাশক ও সম্পাদক খান মো সাইফ উদ দৌলা শাওন কর্তৃক প্রকাশিত।
নির্বাহী সম্পাদকঃ খ ম সাইফুল হাবিব সজিব,
সারা দেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে বিস্তারিত জানতেঃ whatsapp +8801717165415
Copyright © 2024 দৈনিক ভোরের প্রতিধ্বনি. All rights reserved.