ফিরোজ রহমান, স্টাফ রিপোর্টার মেহেরপুর : লাভের আশায় আগাম বাঁধাকপি চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েছে মেহেরপুর মুজিব নগর উপজেলার ২ শতাধিক চাষী। ঘরোয়া ভেজাল বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছেন চাষিরা ।চাষিদের অভিযোগ জেবিটি সিডসের রাজাসান কপির বীজে শুধু গাছ বড় হচ্ছে, অথচ সময় পেরিয়ে গেলেও বাধাকপির দেখা নেই। উপড়ে ফেলা হচ্ছে জমির বাঁধাকপি। ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের তথ্য সংগ্রহ করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে।
সরজমিনে দেখা গেছে, মেহেরপুরের মুজিব নগর উপজেলার সবজি গ্রামখ্যাত মোনাখালী গ্রামের কপি চাষি দলু মিয়া । অন্যের ২বিঘা জমি লীজ নিয়ে ৮০ হাজার টাকা খরচ করে আগাম জাতের বাঁধা কপি চাষ করেছেন। ক্ষেতে চারা গজালেও অদ্যাবদি কোন পাতা বাধেনি। জেবিটি সিডসের রাজাসান কপির বীজ কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তিনি। কপি ক্ষেত বড় হলেও পাতার ভিতর বল বাধেনি। এতে বড় অংকের টাকা ক্ষতি হয়েছে তার। শুধু দলু মিয়া নয়, তার মতে সদর উপজেলার চকশ্যাম নগর ও মুজিব নগর উপজেলার মোনাখালী, ভবরপাড়া,মানিক নগর,গোপালনগর সহ বিভিন্ন এলাকার দুইশতাধিক’ চাষির ২৩০ হেক্টর জমিতে প্রায় ২ কোটি টাকার লোকসান গুনতে হবে ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের ।
এদিকে ভেজাল বীজ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে সদর উপজেলার বন্দর সহ আশপাশের গ্রামের কৃষকেরা। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা অভিযোগ করে বলেন শহরের বীজ ব্যবসায়ী দয়াল রানা ও সুমনা বীজ ভান্ডারের সুমনের কাছ থেকে এসব বীজ কিনে প্রতারিত হয়েছেন চাষিরা। প্রতারক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহায়তা দাবি করেন তারা।
কৃষি বিভাগের হিসাব মতে এ বছর শুধু মুজিব নগর উপজেলাতেই ২৩০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের বাঁধাকপির চাষ হয়েছে।
বাঁধাকপি চাষি দলু মিয়া জানান, স্থানীয় বাজার থেকে জেবিটি সিডসের সরবরাহকৃত রাজাসান বীজ ব্যবহার করা হয়। বীজ থেকে গাছ জন্মালেও এখন পাতা বাঁধছে না। অন্যান্য কোম্পানির দেওয়া বীজ রোপন করে তারা বাঁধাকপি বাজারে তুলেছেন অথচ জেবিটি কোম্পানির রাজাসান কপি আজও পাতা বাঁধেনি। বিঘাপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এ কপি চাষে।এখন পুরোটাই লোকসান গুনতে হবে।
কপি চাষী মোনাখালী ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান জানান,
ভেজাল বীজের কারণে এলাকার শত শত বিঘা জমির কপি নষ্ট হয়েছে। চাষীরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। আমার ২ বিঘা বাঁধাকপি চাষ করে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা লোকসান হবে। তিনি এই সমস্ত ভেজাল বীজ বিক্রেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।
বাঁধাকপি চাষী সিরাবদ্দিন বলেন, ৩ বিঘা বাঁধাকপি লাগানোর জন্য চারা দিই । যেহেতু আমি আগাম চাষী না সে কারণে আমি সমস্ত ছাড়া নষ্ট করে ফেলি। এতে আমার হাজার দশের টাকা লস হয়েছে। যদি আমি তিন বিঘা জমিতে এই কফির চাষ করতাম তাহলে হয়তো আমারও অনেক টাকা ক্ষতি হতো।
বন্দর গ্রামের আনারুল ইসলাম বলেন, আগাম বাধাকপি চাষে অনেক লাভজনক হয়। যে কারণে আমাদের মেহেরপুর সহ মুজিবনগর এলাকার সমস্ত চাষিরা এই বাঁধাকপি চাষ করে। আমি দয়াল বীজ ভান্ডার থেকে কপির বীজ নিয়ে চারা উৎপাদন করে জমিতে লাগায়। ৬০ দিন হয়ে যাওয়ার পরেও কপির কোন বল আসেনা। খোঁজ নিয়ে দেখি অনেকেরই এই একই অবস্থা। ৭০ দিনের মাথায় আমরা সমস্ত বাঁধাকপির জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে ভেঙে ফেলি। এতে আমার অনেক টাকা লস হয়ে গেল । যাদের সাথে ব্রিজ নিয়েছে তারা এখন পলাতক রয়েছে।
মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মমিন জানান, শীতের আগাম সবজি হিসেবে এ অঞ্চলে ২৩০হেক্টর জমিতে বাঁধা কপির চাষ করা হয়। বীজ কোম্পানির লোকজন ভেজাল বীজ সরবরাহ করায় কপি চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের তথ্য নেওয়া হচ্ছে। ভেজাল বীজ সরবরাহকারী কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কৃষকদের কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে বীজ ক্রয় করার আহ্বান জানান তিন।
ফিরোজ রহমান
স্টাফ রিপোর্টার, মেহেরপুর