জব্দকৃত চালের বস্তা গ্রিল কেটে সরাতে গিয়েও শেষ রক্ষা হলো না খাদ্য কর্মকর্তা

শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি

আছিফুর রহমান রাহুল

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার বাসভবনে সরকারি চালের বস্তা পেয়ে বস্তাসহ বাসভবনটি সিলগালা করে দিয়েছিল ভ্রাম্যমাণ আদালত। সিলগালাকৃত ওই বাসভবনের জানালার গ্রিল বৈদ্যুতিক কাটার মেশিন দিয়ে কেটে জব্দকৃত সেই বস্তা সরানোর পায়তারা করেছেন খাদ্য কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদ। এই ঘটনার পর তাকে খাদ্য কর্মকর্তার পদ থেকে অপসারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

রবিবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ভেদরগঞ্জ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা তার সিলগালাকৃত বাসভবন থেকে জানালার গ্রিল কেটে জব্দকৃত বস্তাগুলো অপসারণের চেষ্টা করেন।

স্থানীয় ও ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার (১১ নভেম্বর) হঠাৎ করেই পরিদর্শনে এসে খাদ্য গুদামের পাশেই থাকা খাদ্য কর্মকর্তার বাসভবনে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার। সেখানে গিয়ে সরকারি সীলমোহরসহ ৫০ কেজির ১০ বস্তা ও ৩০ কেজির ৩ বস্তা চাল জব্দ করা হয়। চালগুলোর পাশেই পরেছিল বিপুল পরিমাণে খালি বস্তা। খালি বস্তাগুলোও জব্দ করে উপজেলা প্রশাসন। খালি বস্তার মধ্যে ৫০ কেজির ৭৫০ টি প্লাস্টিকের, ৫০ কেজির ৫০ টি পাটের ও ৩০ কেজির ৩০০ টি পাটের বস্তা জব্দ করা হয়। বস্তাগুলোসহ বাসভবনটি সিলগালা করে দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর রবিবার সন্ধ্যায় ভেদরগঞ্জ বাজারের ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ থেকে কর্মচারী সজিব ছৈয়ালকে ভাড়া করে এনে খাদ্য কর্মকর্তার বাসভবনের উত্তর দিকের জানালার ৪ টি রড বৈদ্যুতিক মেশিন দিয়ে কেটে ভেতরে প্রবেশ করে খাদ্য গুদামের নৈশ প্রহরী আবু হানিফ। আবু হানিফ প্লাস্টিক ও পাটের বস্তাসহ বেশ কিছু সুতা সরিয়ে ফেলেন। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন টের পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে খাদ্য কর্মকর্তাসহ বৈদ্যুতিক কাটার মেশিন পরিচালনাকারী সজিব ছৈয়ালকে আটক করেন। এসময় নৈশপ্রহরী আবু হানিফ পালিয়ে যান।

ভাই ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের বিল্লাল হাওলাদার বলেন, খাদ্য কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদ আমাকে বলেছিল তালুকদার বাড়ির একটি বাড়ির গ্রিল কাটতে হবে। কথা অনুযায়ী আমার কর্মচারী সজিবকে পাঠাই। পরে জানতে পারি সজিবকে তিনি খাদ্য গুদামের বাসভবনের গ্রিল কাটতে নিয়ে এসেছেন।

বৈদ্যুতিক কাটার মেশিন পরিচালনাকারী সজিব ছৈয়াল বলেন, মহাজন আমাকে ইকবাল মাহমুদের সাথে আসতে বলেছিল। এসে তার কথামত খাদ্যগুদামের বাসভবনের জানালার গ্রিল কেটে দিয়েছি। কাটার পর একজন কিছু বস্তা ও সূতা সরিয়ে ফেলেছে। কথা ছিল বস্তাগুলো সরানোর পরে জানালার গ্রিলটি আবার জোড়া লাগিয়ে দেব। কিন্তু এর আগেই ইউএনও স্যার চলে এসেছেন।

খাদ্য গুদামের নৈশ প্রহরী মোক্তার হোসেন বলেন, হঠাৎ করেই আমার স্ত্রী খবর দেন যে সিলগালাকৃত বাসভবনের জানালার গ্রিল কাটছেন খাদ্য কর্মকর্তা। আমি দ্রুত এসে দেখতে পাই জানালার গ্রিল কেটে ফেলা হয়েছে। ইউএনও স্যারকে দেখে আমার অন্য সহকর্মী হানিফ পালিয়ে গেছে।

শরীয়তপুর জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, জানালার গ্রিল কাটার বিষয়টি অত্যন্ত লজ্জাজনক। বিষয়টি নিয়ে আমরা লজ্জিত। গতকালের ঘটনার পর তার বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছিল। তারপর আজ যা ঘটিয়েছেন, তা ভাষায় করার মত নয়।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গতকাল শনিবার খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির চালসহ এক হাজার একশত খালি বস্তা খাদ্য কর্মকর্তার বাসভবন থেকে জব্দ করে বাসভবনটি সিলগালা করা হয়। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে অজ্ঞাত নাম্বার থেকে মুঠোফোনে জানতে পারি, খাদ্য কর্মকর্তা জানালার গ্রিল কেটে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জব্দকৃত জিনিসগুলো সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করতেছেন। সাথে সাথে আমরা এসে খাদ্য কর্মকর্তাকে হাতে নাতে ধরেছি। তাকে তার পদ থেকে অপসারণ করে জেলা খাদ্য কর্মকর্তার নিকট বুঝিয়ে দেওয়া হবে। বিষয়টি জেলা প্রশাসকসহ দুদককে জানানো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *