মাসুদ রানা সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি :
জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা কাজীপুর উপজেলার ৮নং চরগিরিশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার(২৭ আগষ্ট) চরগিরিশ ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হক অনুপস্থিত। তার অফিস কক্ষ তালাবদ্ধ। স্থানীয়রা জানান, ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি একদিনও পরিষদে বসেননি। তার ব্যক্তিগত কার্যালয় টুক্কার মোড়ে বসে তিনি পরিষদের কার্যাদি পরিচালনা করে আসছেন। এতে করে ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে আসা নাগরিকগণ ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়ছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
রাজনাথপুর গ্রামের রাজু মিয়া বলেন, প্রায় একমাস ঘুরে ঘুরে আমায় মেয়ের একটি জন্ম নিবন্ধন পেয়েছি। তবুও সাতশো টাকা নিয়েছে। পরিষদে সচিব ও উদ্যোক্তা কেউ বসেন না। তারা চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে বসে দায়িত্ব পালন করেন। রাজু মিয়া আরও জানান, চরগিরিশ ইউনিয়ন পরিষদ হতে চেয়ারম্যানের কার্যালয় প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে। ওখানে গিয়ে নাগরিক সেবা নিতে অতিরিক্ত সময় ও অর্থ দুটোই নাগরিকদের বেশি ব্যয় হচ্ছে। আমরা এ ভোগান্তি থেকে পরিত্রাণ চাই।
রানা নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউল হক, নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সরকারি বরাদ্দের টিআর, কাবিখা, কাবিটা ও চল্লিশ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পসহ করোনা ও বন্যায় দুস্থ্য মানুষের বরাদ্দকৃত জিআর, ভিজিডি ও ভিজিএফ বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। তিনি ইউনিয়ন পরিষদকে অকার্যকর করে একটি ভূতুড়ে পরিবেশ তৈরি করেছেন। সন্ধ্যা হলেই পরিষদে বসে নিশার আড্ডা। পরিষদে নেই বিদ্যুৎ পানি ও ইন্টারনেটের ব্যবস্থা। আজ পরিষদের এই বেহাল দশার জন্য তিনিই একমাত্র দায়ী বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এছাড়াও তিনি বলেন, কয়েকদিন পূর্বে এলাকাবাসীর চাপে তিনি পরিষদে আসেন এবং কথা দিয়ে যান। তিনি পরিষদে বসবেন কিন্তু এখনো তিনি পরিষদের বসেননি। তিনি সবসময়ই এলাকাবাসীকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধোকা দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা এই অযোগ্য চেয়ারম্যানের বহিষ্কার চাই।
পরিষদের গ্রাম পুলিশ সুভাস চন্দ্র বলেন, এই ইউনিয়ন পরিষদে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউল হক প্রতি মাসে শুধু ভিজিডি চাউল দেওয়ার সময় আসেন। এছাড়া তিনি এখানে আসেন না। তিনি তার ব্যক্তিগত কার্যালয় বসে সকল কিছু করেন।
অপরদিকে চেয়ারম্যানের যোগসাজশে ইউপি সদস্যগণ বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে অসহায় ও দুঃস্থ মানুষকে কাছ থেকে ৮-১০ হাজার করে নগদ টাকা নেয় ঘর দেওয়ার কথা বলে। কিন্তু আজও তারা ঘর পাননি। এ বিষয়টি চেয়ারম্যানকে অবগত করলেও তিনি ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউল হক বলেন, চেয়ারম্যান হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদে বসার নিয়ম। কিন্তু আমি তা করিনি। এটা আমার ভুল হয়েছে। পরিষদের এ বেহাল দশার জন্য আমিই দায়ী এবং এই ব্যর্থতা আমি স্বীকার করছি। আগামী দিনগুলোতে ইউনিয়ন পরিষদে বসবো এবং ইউনিয়ন পর্ষদ’কে নিয়ে সুন্দরভাবে কার্য পরিচালনা করবো। এছাড়াও তিনি বলেন আমার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আনীত অভিযোগ সম্পন্ন সত্য নয়।