কোটালীপাড়ায় প্রাথমিকে ১২২ শিক্ষক, উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫৬টি পদশূন্য

ইস্রাফিল খান, গোপালগঞ্জ(জেলা)প্রতিনিধি

স্কুল আছে, কম্পাউন্ড আছে, বেঞ্চ, টেবিল, চেয়ার আছে, খেলার মাঠ, লাইব্রেরি, শিক্ষার্থীও আছে কিন্তু শিক্ষক নেই – এমন বিদ্যালয় চলবে কি? আবার চাহিদানুরূপ শিক্ষক নেই, শিক্ষকের পদশূন্য, সেখানেও কি লেখাপড়া সঠিক পদ্ধতিতে চলবে, না ছাত্ররা ক্লাসে আসবে, না শিক্ষা সম্পূর্ণ হবে বা প্রত্যাশিত রেজাল্ট হবে? ড্রাইভার ছাড়া গাড়ি চলে না, আবার গাড়ির কলকব্জা ঠিক না থাকলেও গাড়ি চলে না। শিক্ষাও তেমনি। শিক্ষক ছাড়া শিক্ষা হয় না। এককথায় শিক্ষা হচ্ছে ‘গুরুমুখী’।

এদিকে, গোপালগঞ্জ জেলাধীন কোটালীপাড়া উপজেলায় প্রাথমিকে ১২২ শিক্ষকের ও উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫৬টি পদশূন্য। এই পরিস্থিতিতে একই সঙ্গে প্রশাসনিক নিজ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পাঠদান কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষকেরা। দেখা যায় নির্ধারিত শিক্ষক না থাকায় স্কুলের বাংলা ইংরেজি গ্রামার ক্লাসে মাঝে মাঝে প্রক্সি দিচ্ছে বিজ্ঞানের শিক্ষক, ধর্ম পড়াচ্ছে সমাজের শিক্ষক, ভূগোল বুঝাবার কেউ নেই, বায়োলজি কেমেস্ট্রি বুঝতে কোনো ল্যাব সহকারীর কাছে ছুটছে প্রাইভেট পড়তে। এমন অনেক সঙ্কট নিয়েই শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবর্ষ শেষ হয়ে যায়।

একাধিক অভিভাবক জানান, শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় বর্তমানে দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষকরা বিপাকে পড়েছেন। তাদেরকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। বেশিসংখ্যক ক্লাস নেয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষক না থাকায় বা নিয়োগ না দেয়ায় শিক্ষার্থীরা সঙ্কটে নিপতিত হয় এবং কোনোক্রমে জোড়াতালি দিয়ে পড়িয়ে বা না পড়িয়েই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসিয়ে দেয়া হয়। যাদের অর্থবিত্ত আছে তারা স্কুলের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষক আছে না আছে সেটা বিবেচনা না করে বাইরে প্রাইভেট পড়িয়ে অভিভাবকরা বিষয়টা পুষিয়ে নেন। প্রাইভেট পড়তে যাদের সামর্থ্যরে অভাব, মূলত তাদের সমস্যাটাই বেশি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার একাধিক সহকারি শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক সহ নির্ধারিত শিক্ষক না থাকলে স্কুলের সাথে ক্লাসে কোন শৃঙ্খলা থাকেনা। শিক্ষকেরা নিজের ইচ্ছামত চলেন। এছাড়া একজন সহকারী শিক্ষককে অন্য শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হলে তিনি নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে ক্লাস নিতে পারেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলায় ১৮৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ১১৯টি সহকারী শিক্ষকসহ মোট ১২২টি পদ খালি রয়েছে। শূন্যপদ পূরণের জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিক নুর আলম সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলায় এমপিও ভুক্ত ৪৫টি উচ্চ বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫টি প্রধান শিক্ষক, ৫টি সহকারী প্রধান শিক্ষক, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর ৭টি, ক্লার্ক ২টি, চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারি ৩৭টি সহ মোট ৫৬টি পদ খালি রয়েছে। শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণের জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত লোকবল নিয়োগ দিয়ে এই সংকটের সমাধান করা হবে।

কোটালীপাড়া শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. এনায়েত বারী সাংবাদিকদের বলেন, অনেক উচ্চশিক্ষিত মানুষের জীবন ভিত্তিক লেখায় দেখা যায়, তারা তাদের জীবনগঠন ও পড়ালেখার শক্ত ভিত্তি গঠনে শিক্ষকদের অবদানের কথা তুলে ধরেন। একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অন্তরে জ্বালিয়ে তুলতে পারেন জ্ঞানের আলোক, জ্ঞানতৃষ্ণা। সামনের আলোকিত পথের দিকনির্দেশনাও তাদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পেয়ে থাকেন। তাই বিদ্যালয়ে সুযোগ্য ও দক্ষ শিক্ষকের গুরুত্ব অপরিসীম।

কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীনুর আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, অনেক শিক্ষকই গ্রামীণ স্কুলগুলো থেকে শহরে বদলির চেষ্টায় ব্যস্ত থাকেন। যাতায়াতের সুব্যবস্থা থাকার পরও গ্রামে স্থায়ী হচ্ছেন না। শিক্ষক স্বল্পতায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে এমন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে যেখানে বেশি শিক্ষক আছেন, সেখান থেকে ডেপুটেশন করে শিক্ষক স্বল্প প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *