বিপুল রায়- কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামে ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে চতুর্থ দফা বন্যার পানি নেমে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখন তীব্র নদীভাঙন দেখা দিয়েছে সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার উলিপুরে বন্যার পানি কমলেও তিস্তার ভাঙনে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তীরবর্তী মানুষ। এমনকি স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন। বেশ কয়েক দিনের বৃষ্টি ও উজান ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে নদীভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে উপজেলার তিস্তা নদীবেষ্টিত দলদলিয়া ও থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াইপিয়ার, অর্জুন, লালমসজিদ, ভেন্ডার পাড়া, কুমার পাড়া, ফকির পাড়া ও শেখের খামার এলাকার ভাঙনকবলিত মানুষ। এসব এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। নিরুপায় হয়ে অন্যের জায়গায় অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন। তিস্তাপাড়ের মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন দিনের পর দিন।
এদিকে উপজেলার গোড়াইপিয়ার, কুমার পাড়া ও ফকির পাড়া এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েক দিনের নতুন করে নদীভাঙনে একরের পর একর আবাদি জমি ও বসতবাড়ি এবং বড় বড় গাছ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গোড়াই পিয়ারের এলাকাবাসী জানান, এখনে যেভাবে নদীভাঙন শুরু হয়েছে তাড়াতাড়ি ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিলে এখানকার ৩ থেকে ৪টি গ্রামের ৫ থেকে ৬০০ পরিবার অসহায় হয়ে যাবে। হুমকির মুখে পড়া গ্রামগুলোর মধ্যে মগাপাড়া, ঝাজুয়াপাড়া, ফকিরপাড়া, কানিপাড়া, ভেন্ডারপাড়া, কুমারপাড়া ও পাকারমাথা। এ ছাড়াও গোড়াই পিয়ার দাখিল মাদরাসা, গোড়াই পিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোকডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোকডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়, দক্ষিণ চর হোকডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি ওয়ার্ড ক্লিনিক, ৪টি মসজিদ, ২টি মন্দিরসহ উক্ত গ্রামগুলোর কয়েক হাজার পরিবার।
তিস্তার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজন জানায়, আমরা কোনো সাহায্য চাই না, নদী সংস্কার চাই। ভাঙন এলাকাগুলোতে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙনরোধ করার জোর দাবি জানান তারা। উলিপুরের থেতরাই ইউনিয়নের কিশোরপুর ফকির পাড়া গ্রামের মনোয়ারা বেগম (৫০) জানান, আমার বাড়ি এ পর্যন্ত তিনবার তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আবার ভাঙনের কবলে পড়েছে। আমার স্বামী প্যারালাইজড অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে। আমি নিরুপায় হয়ে পড়েছি। আমার বাড়ির সামনে জিও ব্যাগ দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
একই এলাকার নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী সীমা আক্তার (১৫) জানান, আমাদের ঘর ভাঙনের কবলে পড়েছে। কখন যেন থাকার ঘরটুকুও তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। রাতে ঘুম নেই পড়ালেখায় মন নেই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হচ্ছে।এ ছাড়াও বিভিন্ন এলাকার তিস্তার পাড়ে আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন তাদের মধ্যে আব্দুস ছামাদ (৭০), আব্দুল হামিদ (৬৫), আজিরন বেওয়া (৫৫), আয়শা বেগম (৬০) ও আফরুজা বেগম (৪৫) জানান, তিস্তার ভাঙনে আমরা দিশেহারা হয়ে গেছি। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি। অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছি। আমরা সাহায্য চাই না, আমরা চাই নদী সংস্কার। এ ছাড়া ভাঙন রোধের জন্য জিও ব্যাগ ফেলার জোর দাবি জানাচ্ছি।
থেতরাই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা বলেন, তিস্তার ভাঙনে আমার এলাকার কয়েকটি জাগায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা করা হচ্ছে। পাউবোর সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
এদিকে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার দুটি ইউনিয়নে দীর্ঘদিন নদীশাসনের অভাবে অসহায় মানুষ নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় তিস্তা নদীর সঙ্গে সংগ্রাম করছেন তবুও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত নদী তার রূপ পরিবর্তন করে তার ভাঙন অব্যাহত রেখেছে। তিস্তা পাড়ের মানুষজন নিজের শেষ সম্বল ভিটেটুকু রক্ষার জন্য চেষ্টা করছেন।ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নে গতিয়াশাম, বরদারগা, বুড়িরহাট ক্রোসবাধ, খিতাবখাঁ সরকারি প্রাইমারি স্কুল, কমিউনিটি ক্লিনিক বাজার কোনোটাই যেন রক্ষা হচ্ছে না। এদিকে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে রামহরি, মৌলভীপাড়া, ডাংরারহাট, গাবুর হেলানসহ বিভিন্ন এলাকা আজ তিস্তার ভাঙনে হুমকির মুখে।
তিস্তাপাড়ের ইয়াছিন আলী বলেন, আমরা শঙ্কিত। তিস্তার পানি বাড়লে বন্যা দেখা দেয় আর পানি কমলে তীব্র হারে ভাঙনের করাল গ্রাসে নিমজ্জিত হতে হয়, এ কেমন প্রকৃতির বৈচিত্র্য রূপ তা ভেবে পাই না। দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে হয়তো নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা আর হবে না।বুড়িরহাটে ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের স্পারটির অর্ধেক ভেঙে যাওয়ায় তিস্তাপাড়ের মানুষের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় মিনিটের দিকে আরসিসি স্পারটির ৩০ মিটার পানির তীব্র স্রোতে ভেঙে যায়।
ইউনিয়নে প্রায় দেড় হাজার পরিবার নিমজ্জিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা এবং এরই মধ্যে স্পারটি ভাঙনের ফলে বাড়ছে পানি, রুদ্ররূপে তিস্তা, আতঙ্ক বিরাজ করছে চরাঞ্চলে। রাত যতই গভীর হচ্ছে নদীর গর্জন ততই বাড়ছে। এলাকার লোকজন ও কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগের মাধ্যমে চেষ্টা করছেন স্পারটির শেষ রক্ষা করার জন্য।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, নদীভাঙন এলাকায় আমরা জিওব্যাগ ফেলে এবং প্রয়োজনীয় মালামালসহ সার্বক্ষণিক নদীভাঙন রোধে কাজ করে যাচ্ছি।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল আরিফ জানান, নদীভাঙন রোধে প্রশাসনের তৎপরতা অব্যাহত আছে। এ ছাড়াও ভাঙন ও বন্যাকবলিত মানুষের সহযোগিতার জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে বিষয়গুলোর তদারকি করছি।
প্রকাশক ও সম্পাদক খান মো সাইফ উদ দৌলা শাওন কর্তৃক প্রকাশিত।
নির্বাহী সম্পাদকঃ খ ম সাইফুল হাবিব সজিব,
সারা দেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে বিস্তারিত জানতেঃ whatsapp +8801717165415
Copyright © 2024 দৈনিক ভোরের প্রতিধ্বনি. All rights reserved.