বিপুল রায় -কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে চলছে বসতভিটা ও জায়গা জমি দখলদারিত্বের প্রতিযোগিতা। এনিয়ে এলাকায় লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত।
সরেজমিনে ও থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, গত ০৬ আগষ্ট সকাল ১০ ঘটিকায় ও ১০ আগষ্ট বিকেল ২ টার দিকে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার চর ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড নতুন হাট বাজার এলাকার মৃত হাসেম আলী পুত্র লুৎফর রহমান (৩৭) কে মারপিট করে, জোর পূর্বক দিবালোকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে ঘরবাড়ি ভাংচুর করে তার বসতভিটা দখল করে নেয় ভূমিদস্যু আমিনুর রহমান, নুর ইসলাম, আজাদুল ইসলাম, আব্দুল জলিল ও আনোয়ার হোসেন গং। সেই সাথে ঘরের আসবাবপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়। এরপর ভুক্তভোগী লুৎফর রহমান ও তার পরিবারের লোকজনকে বাড়ি থেকে বাহির করে দিয়ে তার বাড়ির চারপাশ টিনের বেড়া দিয়ে দখল করে নেয় তার পুরো বসতভিটা। অভিযোগ দিয়ে কোথাও বিচার না পেয়ে অদ্যবধি ভুক্তভোগী পরিবার অসহায় হয়ে প্রানের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে মানুষের দ্বারে দ্বারে। এনিয়ে বিভিন্ন সময় গনমাধ্যমে নিউজ হলেও নজরে আসেনি প্রশাসনের উপর মহলের কোন কতৃপক্ষের। ভুক্তভোগী লুৎফর রহমান ও তার বোন হাসিনা বেগম বলেন, আমাদের বসতভিটা ও সুপারির বাগানসহ ৪২ শতাংশ জমি জোর পূর্বক দখল করে নিয়েছে ভূমিদস্যু আমিনুর রহমান গং। আমি থানায় অভিযোগ করেও এর কোন প্রতিকার পাইনি। ভূমিদস্যুরা আমাকে ও আমার পরিবারের সকলকে প্রানে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আমাদের বাড়ি থেকে বাহির করে দিয়েছে।
অপর একটি ঘটনায় দেখা যায়, ভূরুঙ্গামারী উপজেলার চর ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের ভূরুঙ্গামারী মৌজার ৯ নং ওয়ার্ড খাসের গ্রাম এলাকার সোবাহান আলী (৬৫) নামের এক ভুক্তভোগীর ক্রয় সুত্রে, জেল নং- ৫০, খতিয়ান নং- ১২৯, সাবেক দাগ নং ২২৬৬, হাল দাগ ৪৫৯ এ ৪৪ শতাংশ জমির মালিক হয়ে দীর্ঘ ২৭ বছর হতে ধরে ভোগদখল করে আসছে। গত ২২ অক্টোবর ২০২৪ ইং তারিখ দুপুর ১.৩০ ঘটিকার সময় আব্দুল করিম ও তার ভাতিজা রাসেল মিয়া (২৮), ওই জমিতে পাওয়ার টিলার দিয়ে হাল চাষ করতে গেলে। একই এলাকার দুলাল মিয়ার হুকুমে আমিনুর রহমান, সুরত জামান গং সহ হাতে বেকি, দা, কুড়াল, খন্তা, লাঠিসোঠা নিয়ে দলবদ্ধ ভাবে এসে জমিতে হালচাষ করতে বাঁধা প্রদান করে ও গালিগালাজ করতে থাকে। ভুক্তভোগীর ভাতিজা রাসেল মিয়া গালিগালাজ করতে নিষেধ করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে রাসেল মিয়াকে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি সহ মারপিট করে। এসময় আব্দুল করিম তার ভাতিজা রাসেল মিয়াকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসলে আরিফুল ইসলাম হত্যার উদ্দেশ্যে আব্দুল করিমের অন্ডকোষ চেপে ধরে। পরে দুলাল মিয়া খন্তা দিয়ে আব্দুল করিম এর মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত কাটা জখম করে। সেই সুযোগে একই এলাকার মৃত মোকছেদ আলীর পু্ত্র আমিনুর রহমান, দুলাল হোসেন, ছুরত জামান গংসহ ভুক্তভোগীর পরিবারের সকলকে মারধোর করে আহত। যার কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
অপর একটি ঘটনায় দেখা যায়, কচাকাটা থানার সুবলপাড় বাজারে ক্রয়কৃত সম্পত্তিতে ২৭ বছর ধরে দোকান ঘর তুলে ব্যবসা বানিজ্য করে আসছিল ঐ এলাকার আউয়াল নামের এক ভুক্তভোগী। দোকান ঘরের টিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় গত (২৭ আগষ্ট) দোকান ঘরটি মেরামত করতে গেল বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের স্হানীয় কতিপয় কিছু নেতাকর্মী দোকান ঘর মেরামত কাজে বাঁধা দেয়। ইতিমধ্যে কতিপয় নেতাকর্মীদের একটি ভিডিও চিত্র প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ৫ জন ব্যক্তি একই সাথে এসে দোকান ঘর নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে হুমকি দিচ্ছে। অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, গত ২৯ আগষ্ট সকালে পুনরায় দোকান মেরামতের কাজ শুরু করলে সুবলপার বাজারের মিলন মিয়া, জাহাঙ্গীর আলমসহ দোকান ঘর ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়।
দখলদারিত্বের আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সুশীল সমাজ বলছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান ও দখলদারিত্ব বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে দেশবাসী আশা করলেও তার উল্লেখযোগ্য প্রতিফলন এখনো দৃশ্যমান হচ্ছে না।
গণঅভ্যুত্থান ও ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত বিজয়ে দেশবাসী আশা করেছিল যে, ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও অতীতের মতো দখলদারিত্ব, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পরিবর্তন আসবে। কিন্তু দেশের আইনশৃঙ্খলা এখন পর্যন্ত যথাযথ উন্নতি হয়নি। দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে দখলদারিত্ব, পাল্টা দখলদ্বারিত্ব, হুমকি-ধামকি চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
ভুক্তভোগীরা বলেন, আমরা ঘটে যাওয়া এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে ঘরবাড়ি ভাংচুর ও জবর দখলের মতো ঘঠনার বিষয়ে অভিযোগ করেও এর কোন প্রতিকার পাচ্ছি না। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনাসহ যে দখলদারিত্ব কায়েম হয়েছে তার অবসান ঘটাতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।