বিপুল রায়- কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধনিরাম গ্রামের টাপুরচরে যাতায়াতের জন্য পাইকের ছড়া নালার উপর নির্মিত কাঠের সেতুটির বর্তমানে নড়বড়ে অবস্থা। সেতুটি যাতায়াতের অনুপযোগী হওয়ায় নালা পারাপারে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। যাতায়াতের বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় জীবন-জীবিকার তাগিদে নড়বড়ে সেতুতে চলছে হামাগুড়ি দিয়ে যাতায়াত। আর ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে যাতায়াতের ফলে যে কোন সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা স্থানীয়দের।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কাঠ দিয়ে নির্মিত সেতুটির বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে গেছে। সেতুর পাটাতনের তক্তা ভেঙ্গে পড়ে গিয়ে ফাঁকা হয়ে গেছে অনেক জায়গায়। নড়বড়ে অবস্থা সেতুর খুটিগুলোর। সেতুতে একসঙ্গে দু’জন ওঠলেই দুলে ওঠে গোটা সেতু। দু’পাশের সংযোগ সড়কের মাটিও গেছে ধসে। ফলে সেতুতে উঠতেই যথারীতি সংগ্রাম করতে হয় নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের। তবুও নানা প্রয়োজনে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করতে দেখা গেছে অনেককে।
স্থানীয় বাসিন্দা সাদের আলী(৬৫) বলেন, নালা পার হয়ে টাপুরচরে যাতায়াতের জন্য বছর ছয়েক আগে এই কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। কাঠের সেতু হলেও এটাই আমাদের নালা পারাপারের একমাত্র অবলম্বন। এই সেতু দিয়েই আমরা চরের জমিতে আবাদ করে ফসল বাড়িতে নিয়ে আসি। চরে যারা বসবাস করে তারাও এই সেতু দিয়ে যাতায়াত করে। সেতুটি এই অবস্থার কারণে এখন আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। সুশীল চন্দ্র নামের আরেকজন বলেন, আমি কৃষক মানুষ। চরের জমিতে চাষাবাদ করে সংসার চালাই। সেতুটির এমন দশার কারণে এখন যাতায়াতে আমাদের খুব ভোগান্তি। চরের জমির আবাদ বাড়িতে আনতে খুব অসুবিধা হয়। টাপুর চরের বাসিন্দা মেছের আলী, কৃষ্ণকান্ত, জোবেদ আলী ও ইব্রাহিম খলিল জানান, টাপুরচরে কোন দোকানপাট নেই। তাই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে তাদের প্রতিদিনই এই সেতু দিয়ে নালা পার হয়ে বড়ভিটা বাজারে যেতে হয়। কিন্তু সেতুটির এই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে সেতু থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। চরের ছোট শিশুরা সেতু থেকে পড়ে যাওয়ার ভয়ে এখন আর স্কুলে যেতে চায় না। সেতুতে কোন যানবাহন চলে না। ফলে মালামাল পরিবহনে ভরসা কাঁধ আর মাথা। চরে কেউ অসুস্থ হলে রোগীকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হয়। তারা আরও জানান, এখানে সরকারি আবাসন আছে। আবাসনে যারা থাকেন তাদেরও যাতায়াতের কষ্ট।অত্র অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেতুটির কারণে নালা পারাপারের ভোগান্তি দুর করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
উপজেলা ত্রাণ পুনর্বাসন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সবুজ কুমার গুপ্ত বলেন, বড়ভিটা ইউনিয়নের টাপুরচরে আবাসন প্রকল্পের উপকারভোগী সহ ওই এলাকার বাসিন্দাদের যাতায়াতের জন্য কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। সেতুটি বর্তমানে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর ফলে স্থানীয়দের যাতায়াতের ভোগান্তি হচ্ছে। যাতায়াতের ভোগান্তি দুর করতে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আশা করছি অচিরেই সেখানে নতুন সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হবে।