আরডিএর সেই প্রকৌশলী ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে চার্জশিট

পাভেল ইসলাম মিমুল রাজশাহী ব্যুরো :

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) সহকারী প্রকৌশলী ও বঙ্গবন্ধু চত্বর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) শেখ কামরুজ্জামান এবং তার স্ত্রী নিশাত তামান্নার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে হওয়া দুই মামলার চার্জশিট দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

মঙ্গলবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সমন্বিত রাজশাহী অঞ্চল কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামান ও তার স্ত্রী নিশাত তামান্নার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি দুর্নীতি মামলার চার্জশিট দাখিল করেন। দুদক গত বছরের ১ জুন শেখ কামরুজ্জামান ও ২ জুন তার স্ত্রী নিশাত তামান্নার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ মামলা দুটি দায়ের করেছিল।

মামলার অভিযোগপত্রের (চার্জশিট) বিবরণ অনুযায়ী শেখ কামরুজ্জামান ২০০৫ সালে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। পরে তাকে এস্টেট অফিসার হিসেবে পদায়ন করা হয়। এই সময়ে সরকারি প্লট ও দোকানপাট বরাদ্দ এবং বিক্রিতে ব্যাপক দুর্নীতি করেন। এই দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক হন। স্ত্রী নিশাত তামান্নার নামেও করেন বিপুল সম্পদ ও নগদ টাকা।

এদিকে ২০১৭ সালে অভিযোগ পেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন শেখ কামরুজ্জামানের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেন। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর দুদক ২০২২ সালের ১ জুন প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ৭৬ লাখ ৫০ হাজার ৬৮৬ টাকার সমপরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে গত ২৯ জুন শেখ কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগপত্রের বিবরণ অনুযায়ী, প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুর্নীতির মামলা তদন্তকালে তার আরও অবৈধ সম্পদের খোঁজ পায় দুদক। অভিযোগপত্রে কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে সর্বমোট ১ কোটি ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৯১১ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই পরিমাণ সম্পদ তিনি অবৈধ উপায়ে অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে।

দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,দুদক থেকে শেখ কামরুজ্জামানকে তার সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য বলা হয়। দাখিলকৃত সম্পদক বিবরণী,আয়কর ফাইলে জমা রিটার্ন ও মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধান ও তদন্তকালে শেখ কামরুজ্জামানের অবৈধ সম্পদের পরিমাণ প্রাক্কলিত ৭৬ লাখ ৫০ হাজার ৬৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ১ কোটি ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৯১১ টাকা হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন জানান,প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনের ২০০৪ সালের ২৬(২) ও ২৭(১) এবং ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং আইনের ৪(২) ও ৪(৩) ধারার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর আগে গত ১৬ জুলাই দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে চার্জশিট দাখিলের মঞ্জুরি দেওয়া হয়। গত ২৯ আগস্ট মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয় মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে। এ মামলাটি দায়েরের পর কামরুজ্জামান পলাতক থাকলেও ২০২২ সালের ৪ অক্টোবর আদালতে হাজির হয়ে জামিন লাভ করেন।

জানা গেছে,শেখ কামরুজ্জামানের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার বারখাদা গ্রামে। বর্তমানে রাজশাহী মহানগরীর পবা নতুনপাড়ায় বাড়ি করে বসবাস করেন। দুদক সূত্রে আরও জানা যায় শেখ কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে ঘুস দিয়ে চাকরি পাওয়ার অভিযোগে আরও একটি দুর্নীতির মামলা রাজশাহীর স্পেশাল জজ আদালতে চলমান আছে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার বিরুদ্ধে ওই দুর্নীতি মামলার চার্জশিট দাখিল করে দুদক। মামলাটি আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণপর্যায়ে আছে,তবে কামরুজ্জামান জামিনে রয়েছেন।

অন্যদিকে,পৃথক দুর্নীতি মামলায় শেখ কামরুজ্জামানের স্ত্রী নিশাত তামান্নার (৩৯) বিরুদ্ধেও একই দিনে চার্জশিট প্রদান করা হয়েছে আদালতে। মামলায় তার বিরুদ্ধে ৫৩ লাখ ১৩ হাজার ২১১ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হলেও তদন্তকালে তার আরও অবৈধ সম্পদের খোঁজ পায় দুদক। ফলে অভিযোগপত্রে নিশাত তামান্নার বিরুদ্ধে ৬০ লাখ ৬২ হাজার ১১৮ টাকা অবৈধভাবে অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৭ জুন নিশাত তামান্নাকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। একই বছরের ৬ আগস্ট তিনি তার সম্পদ বিবরণী দুদকে দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, নিশাত তামান্না নিজেকে একজন ব্যবসায়ী ও মাছ চাষি হিসেবে দাবি করলেও এর পক্ষে প্রমাণপত্র দেখাতে পারেননি।

নথিপত্রের বিবরণ অনুযায়ী নিশাত তামান্না ৬৮ লাখ ৪৯ হাজার ৭৮৪ টাকা মূল্যমানের সম্পদ অর্জন করেছেন। কিন্তু আয়কর রিটার্ন ফাইল ও দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী অনুযায়ী তার বৈধ আয় মাত্র ৭ লাখ ৮৭ হাজার ৬৬৬ টাকা। ফলে তিনি ৬০ লাখ ৬২ হাজার ১১৮ টাকা অবৈধ উপায়ে অর্জন করেছেন, যা দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তামান্না রাজশাহী মহানগরীর শাহমখদুম থানার পবা নতুনপাড়া মহল্লার নূরুল ইসলামের মেয়ে। তামান্না পবা নতুনপাড়ায় স্বামী প্রকৌশলী শেখ কামরুজ্জামানের বাড়িতে বসবাস করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *