ফিরোজ রহমান স্টাফ রিপোর্টার :
১ম পর্ব
মানি লন্ডারিংয়ে সস্ত্রীক ফেঁসে যাচ্ছেন অনলাইন জুয়ার অন্যতম শীর্ষ এজেন্ট মাদার আলী ওরফে মাদার মাস্টার। অভিযোগ রয়েছে, এ মাদার মাস্টারের মাধ্যমে জুয়া খেলে সর্বস্বান্ত হয়েছে মেহেরপুরসহ সারা দেশের হাজার হাজার তরুণ ও তাদের পরিবার।
প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় এতদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও এবার তিনি ধরা পড়ছেন সিআইডির জালে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স থেকে পাওয়া চিঠি অনুযায়ী অনলাইন জুয়া এবং মানিলন্ডারিংসংক্রান্ত অভিযোগের অনুসন্ধান দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করতে তাদের নোটিশ করেছে সিআইডি সদর দপ্তর।
মুজিবনগর থানার ওসি মিজানুর রহমান প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে কালবেলাকে মানি লন্ডারিং তদন্তের জন্য মাদার আলী ওরফে মাদার মাস্টার ও তার স্ত্রী লায়লী খাতুনকে তলবের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, মাদার মাস্টার মুজিবনগরের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা আমাম হোসেন মিলু এবং মেহেরপুর-১ সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সান্নিধ্যে থেকে নিজেকে বড় রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে দাবি করতেন। সুযোগ পেলেই জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুই নেতার সঙ্গে তার সুসম্পর্কের জানান দিতেন। এভাবেই মিলু ও ফরহাদের ছত্রছায়ায় তিনি অনলাইন ক্যাসিনোতে দেশের অন্যতম শীর্ষ এজেন্ট বনে যান।
ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন মেহেরপুরের অনলাইন ক্যাসিনো এজেন্টরা,কিন্তু
অভিযোগ রয়েছে তার নামে যেন কোনো সংবাদ প্রকাশ করা না হয় এজন্য কয়েকজন সাংবাদিককে নিয়মিত মাসোহারা দিতেন।
সিআইডি সদর দপ্তর পাঠানো চিঠিতে মুজিবনগর থানার ওসিকে অনলাইন জুয়াসংক্রান্ত অনুসন্ধান উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স থেকে প্রাপ্ত মানি লন্ডারিংসংক্রান্ত অনুসন্ধানটি দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে নিম্নে বর্ণিত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন।
অনলাইন জুয়াসংক্রান্ত অনুসন্ধানকালে ওই ব্যক্তির নিজ এবং তার প্রতিষ্ঠান এম এন এ ট্রেডার্স এবং তার স্ত্রী লায়লী খাতুনের নামীয় ব্র্যাক ব্যাংকের হিসাবসহ বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে সন্দেহভাজন লেনদেনের তথ্য পওয়া গেছে। এজন্য উক্ত ব্যক্তিদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন। ওই ব্যক্তিদের রোববার (২০ অক্টোবর) সকাল ৯টার সময় সিআইডি সদর দপ্তর, মালিবাগ ঢাকায় জাতীয় পরিচয়পত্রসহ হাজির করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হল।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ইতোপূর্বে অনুসন্ধানের জন্য একই ব্যক্তিকে নোটিশ করা হলেও তিনি হাজির হয়ে তার বক্তব্য প্রদান করেননি। এইবার হাজির না হলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ক্যাসিনো এজেন্ট মাদার আলী ওরফে মাদার মাস্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
মেহেরপুর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের সদস্য এস আই মনির বলেন, আমরা মেহেরপুর থেকে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্সে বেশ কয়েকজনের অনলাইন ক্যাসিনোর মাধ্যমে অর্থ পাচারসহ অবৈধপন্থায় সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধানের জন্য চিঠি দিয়েছিলাম। এরপরে কোনো নোটিশ হয়েছে কিনা সেটা আমার জানা নাই।
মুজিবনগর থানার ওসি মিজানুর রহমান কালবেলাকে বলেন, সিআইডি সদর দপ্তরের ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের উপপুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ জহির রায়হানের কাছে গত ২০ অক্টোবর সকাল ৯টায় তাদের হাজির হতে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। আমরা নোটিশ জারি করেছি। নোটিশ প্রাপ্তিতে দেরি হওয়ায় মাদার আলী ও তার স্ত্রী বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকালে সিআইডি সদর দপ্তরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজিরা দেবেন। আমরা নোটিশটি জারি করে প্রাপ্তি স্বীকার পত্র সিআইডিতে পাঠিয়ে দিয়েছি।
উল্লেখ্য, অনলাইন জুয়া নিয়ে দেশের স্বনামধন্য পত্রপত্রিকায় ধারাবাহিক অনুসন্ধানকালে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, এক ডজনের বেশি লাইনবেট সাইটের এজেন্ট এই মাদার মাস্টার। তার ছেলে অনিক ঢাকায় বাসা ভাড়া করে অভিযাত জীবনযাপন করে এবং ঢাকা থেকে তার বাবা সকল লেনদেন করে থাকে।
ইতোপূর্বে, বছর দুয়েক আগে মেহেরপুরের তৎকালীন পুলিশ সুপারের নাম ভাঙ্গিয়ে স্থানীয় অনলাইন ক্যাসিনো এজেন্টদের কাছ থেকে টাকা তোলার অভিযোগে মাদার মাস্টারকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে তৎকালীন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সুপারিশে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
অনলাইন ক্যাসিনোর অন্যতম মাস্টার এজেন্ট মাদার আলী ওরফে মাদার মাস্টার মুজিবনগর উপজেলার কোমরপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। মেহেরপুর সদর উপজেলার সাহেবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান হিসেবে কর্মরত। নিজ গ্রামে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে রাজপ্রাসাদসম দ্বিতল বাড়ি বানিয়েছেন। বিভিন্ন ব্যবসায়ী লগ্নি করেছেন কোটি কোটি টাকা।এছাড়াও বিভিন্ন জনকে চ্যানেল দেওয়ার নাম করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। চ্যানেল কেনাবেচা নিয়ে বিস্তারিত থাকবে দ্বিতীয় পর্বে।
প্রকাশক ও সম্পাদক খান মো সাইফ উদ দৌলা শাওন কর্তৃক প্রকাশিত।
নির্বাহী সম্পাদকঃ খ ম সাইফুল হাবিব সজিব,
সারা দেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে বিস্তারিত জানতেঃ whatsapp +8801717165415
Copyright © 2024 দৈনিক ভোরের প্রতিধ্বনি. All rights reserved.