সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের চাঞ্চল্যকর হত্যা ও অপহরণ মামলার মুল আসামি ডাকাত সাদ্দাম অস্ত্র সহ র্যাব-৭’র হাতে গ্রেফতার হয়েছে।
গত ২২ জুন ২০২৩ইং তারিখ সন্ধ্যা আনুমানিক ০৭:০০ টার দিকে ভুক্তভোগী ভিকটিম কালাম (৪৮) তার বন্ধুর বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম শহর হতে সীতাকুণ্ডগামী একটি বাসে উঠে।
পরবর্তীতে রাত আনুমানিক ০৮:০০ টার সময় বাসটি বাড়বকুণ্ড বাজারে পৌঁছালে বাসটি নষ্ট হয়ে যায় এবং ভিকটিম কালাম চা খাওয়ার জন্য পাশের দোকানে গেলে কয়েকজন লোক তাকে জোরপূর্বক অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। একই তারিখ রাত আনুমানিক ১০:০০ টায় অপহরণকারীরা ভিকটিম কালামের বড় ভাবীর মোবাইলে কল দিয়ে ১ লক্ষ টাকা দাবি করে এবং উক্ত টাকা না দিলে কালামকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে। পরবর্তীতে ভিকটিম কালামের বড় ভাবী ও ভাই মিলে বিভিন্ন জায়গা থেকে ধার-দেনা করে ৮০ হাজার টাকা ভিকটিম কালামের দুই বোন মরিয়ম ও শাহানা এবং ভিকটিমের স্ত্রী জাহানারা’কে দিয়ে বাড়বকুণ্ড পাঠায়।
তারা মুক্তিপণের ৮০ হাজার টাকা নিয়ে বাড়বকুণ্ড সেবা পেট্রোল পাম্পের সামনে পৌঁছালে অপহরণকারীরা টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং জোরপূর্বক ৩ জনকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। পরদিন সকালে অপহৃত ভিকটিম মরিয়ম তার ভাবীকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানায়, কালামের মুক্তিপণের ৮০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে তাদেরকে অপহরণ করে গাছের ডাল, লোহার রড দিয়ে বেধরক মারধর করে শ্লীলতাহানি করেছে। এছাড়াও অপহরণকারীরা তাদের মুক্তিপণ হিসেবে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করছে এবং মুক্তিপণের টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তাদের হত্যা করে গুম করার হুমকি প্রদান করে।
মুক্তিপণের ৫ লক্ষ টাকা দিতে ব্যর্থ হয়ে নিরুপায় অবস্থায় অপহৃত ভিকটিমদের বড় ভাই/ভাবী থানা পুলিশকে খবর দিলে থানা পুলিশ গহীন পাহাড়ে দীর্ঘ সময় অভিযান পরিচালনা করে অপহৃত তিনজনকে উদ্ধার করে।
পরবর্তীতে উক্ত অপহরণ, নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির বিষয়ে ভিকটিমদের ভাবী বাদী হয়ে ধৃত আসামি সাদ্দামকে প্রধান ও ০৪ জন নামীয় এবং ৫/৬ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে সীতাকুণ্ড মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং-২৪, তারিখ ২৪ জুন ২০২৩; ধারা- ৩৬৪/৩৮৫/৩৮৬/৩২৩/ ৩২৫/ ৩০৭/৩৫৪/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০।
ঘটনার বিবরণে আরো জানাযায়,গত ২২ জুলাই ২০২৩ইং তারিখ সকাল আনুমানিক ০৬:০০ টার সময় নিহত ভিকটিম নুর আবছার এরশাদ তার নিজ কলাবাগানে কাজের উদ্দেশ্য বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।
একই দিন বেলা ১১:০০ টায় ভিকটিম এরশাদ এর চাচা কাজের উদ্দেশ্যে কেরাইরঘা নামক স্থানে পৌঁছালে ভিকটিম নুর আবছার এরশাদ এর রক্তাক্ত অবস্থায় মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন।
পরবর্তীতে ভিকটিমের পিতা বাদি হয়ে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-২৭ তারিখ-২৩ জুলাই ২০২৩, ধারা-৩০২/৪৪ পেনাল কোড ১৮৬০।
র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পেরে অপহরণ মামলার এজাহার নামীয় প্রধান পলাতক আসামি ডাকাত সাদ্দাম চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড থানাধীন জোরামতল এলাকায় তার ভাড়া বাসায় অবস্থান করছে।
উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল গত ২২ ডিসেম্বর শুক্রবার ২:২৫ মিনিটের সময় বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে আসামি সাদ্দাম ডাকাত সাদ্দাম, পিতা-মোঃ জালাল আহম্মদ, সাং-চৌধুরী পাড়া, থানা- সীতাকুণ্ড, জেলা-চট্টগ্রাম’কে আটক করতে সক্ষম হয়।
পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে সুত্রে বর্ণিত মামলার এজাহার নামীয় প্রধান এবং হত্যা মামলার সন্দিগ্ধ পলাতক আসামি মর্মে স্বীকার করে। পরবর্তীতে আসামিকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তার হেফাজতে থাকা একটি আগ্নেয়াস্ত্রের কথা স্বীকার করলে তা উদ্ধার করা হয়।
থানার সিডিএমএস পর্যালোচনা সুত্রে জানা যায় ধৃত আসামি সাদ্দাম ডাকাত সাদ্দাম এর নামে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড থানায় ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ এবং হত্যাসহ সর্বমোট ১০টি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামি ও উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্র সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে আসামীকে সীতাকুণ্ড থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।