সপ্তাহ শেষে , বেড়েছে অস্থিরতা বাজারে ফেরেনি স্বস্তি,

হাসান আহমেদ নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি।

সপ্তাহ শেষেও বাজারে ফেরেনি স্বস্তি। উল্টো অধিকাংশ ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে সৃষ্টি হয়েছে অস্থিরতা। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে কোন কোন পণ্যের দাম বেড়েছে, সেটা এখন হিসাব করা বেশ কঠিন।
তবে মোটাদাগে বলা যায়, দাম বেড়েছে প্রায় সব পণ্যেরই। এরমধ্যে কোনো কোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধি স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকলেও কোনো কোনোটির বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে।

শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) নারায়ণগঞ্জের প্রধান পাইকারি বাজার দিগুবাবুর বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় শীতের সবজিতে ভরপুর বাজার, তারপরও কমছে না দাম। কিছুদিন স্থিতিশীল থাকার পর আবারও বেড়েছে মুরগির ডিমের দাম। বাড়তি দামে এসব পণ্য কিনতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস চরমে।
নির্বাচনের আগে যে গরুর মাংস ৬৫০ টাকা কেজিতে নেমেছিল, তা এখন ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে আটা-ময়দা ও ডালের দামও কেজিতে ১০ টাকা, চাল ৫ থেকে ৬টাকা ও তেলের দাম লিটারপ্রতি ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বেড়েছে চাল, আটা, ময়দা, ডাল, ছোলা, আদা ও রসুন, ব্রয়লার মুরগিসহ আরও বেশ কিছুর দাম।
দিগুবাবুর বাজারে প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায় ও প্রতি পিস বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। এছাড়া, বেগুন প্রতি কেজি ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৫০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, শালগম প্রতি কেজি ৫০ টাকা ও মুলা প্রতি কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া, ঝিঙা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, করোলা প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ক্ষিরা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পেঁয়াজের ফুলকি প্রতি মুঠো ২০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৫০ টাকা, সাধারণ শিম প্রতি কেজি ৬০ টাকা, আর বিচিওয়ালা লাল শিম ৮০ থেকে ১০০ টাকা, লাল আলু প্রতি কেজি ৭০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৭০ থেকে ৮০ টাকা ও ক্রকলি প্রতি পিস ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে আসা অপূর্ব আহমেদ নামের এক ক্রেতা বলেন, ভরা মৌসুমে শীতকালীন সবজির দাম কমার কথা। কিন্তু বাজারে এসে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে।
এখন এতো দামে সবজি বিক্রি হওয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। বাজারে সাংঘাতিকভাবে সিন্ডিকেট কাজ করছে। যা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। যে কারণে এ পরিস্থিতি।
বিক্রেতা সবজির দাম বাড়ার পেছনে কুয়াশাকে দায়ী করে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বেশি কুয়াশা পড়ছে। এতে নির্ধারিত সময়ে পণ্যবাহী ট্রাক আসছে না। সে কারণে নারায়ণগঞ্জে তুলনামূলক পণ্য কম আসছে। এছাড়া বৈরী আবহাওয়ার কারণে কৃষকের অনেক সবজি নষ্ট হচ্ছে। এর প্রভাবও পড়েছে বাজারে।
এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আকস্মিকভাবে কমে যায় গরুর মাংসের দাম। সেই সময় দাম কমে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি শুরু হয় ৬০০ টাকায়। পরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার।
তবে, বাজারে সরকারের এ নির্দেশনা মানার কোনো বালাই নেই। বর্তমানে দাম বাড়িয়ে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকায় বিক্রি করছেন দোকানিরা। এছাড়া, প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায়।
সেইসঙ্গে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। সোনালী মুরগি প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি কক ও লেয়ার ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, গত কিছু দিন ধরেই বাড়তি যাচ্ছে সব ধরনের মাছের দাম। বাজারে প্রতি কেজি পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া, তেলাপিয়া মাছ প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, পাবদা প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, শিং মাছ আকার ভেদে প্রতি কেজি ৪৮০ থেকে ৫৫০ টাকা, রুই মাছ প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতলা প্রতি কেজি ৩২০ টাকা, চাষের কই প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, ছোট টেংরা মাছ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, গলদা চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, বোয়াল প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ও শোল মাছ প্রতি কেজি ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নির্বাচনের পর থেকে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে চালের বাজার । কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাজারে দেখা গেছে, সরু (মিনিকেট) চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৪ টাকা দরে। যা সপ্তাহ দুয়েক আগে ছিল ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা।
অর্থাৎ কেজিতে সর্বোচ্চ ৬ টাকা বেড়েছে। মাঝারি (বিআর-২৮, পায়জাম) চালের কেজিতে সর্বোচ্চ ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা। এছাড়া কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ’র (টিসিবি) তথ্য বলছে, এক মাসের ব্যবধানে সরু চালের দাম ৫ দশমিক ৩৮, মাঝারি চাল প্রায় ৩ এবং মোট চালের দাম প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *