মোঃ সারোয়ার হোসেন অপু
স্টাফ রিপোর্টারঃ
নওগাঁর মহাদেবপুরে আয়োজিত জনপ্রতিনিধিদের মিলন মেলায় নিজেদের নানা কষ্টের কথা বললেন ইউপি সদস্যরা। প্রশাসনে তাদের ইমেজ সংকট, সম্মান না পাওয়া, ভাতা কম পাওয়াসহ নানা সমস্যার সমাধান দাবি করেন তারা।গতকাল ১৮ অক্টোবর বুধবার দুপুরে উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স চত্ত্বরে আয়োজিত এ মিলন মেলায় মহাদেবপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার, সংরক্ষিত মহিলা আসনের মেম্বার এবং বদলগাছী উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অংশ নেন। নওগাঁ-৩ মহাদেবপুর-বদলগাছী আসনের এমপি সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম এতে প্রধান অতিথি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান আহসান হাবীব ভোদন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান সোহাগ, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাফফর হোসেন, জেলা পরিষদ সদস্য গোলাম নুরানী আলাল, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবুল চন্দ্র বাবু ঘোষ উপস্থিত ছিলেন। সদর ইউপি চেয়ারম্যান সাঈদ হাসান তরফদার শাকিল এতে সভাপতিত্ব করেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত সহকারি অধ্যাপক হাফিজুল হক বকুল এ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার রইচ উদ্দিন বলেন, তারা যে ভাতা পান তা সম্মানজনক নয়। তিনি ভাতা বাড়ানোর দাবি জানান। সফাপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার নাসির উদ্দিন বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানরা প্রতিমাসে উপজেলা সমন্বয় সভায় প্রশাসনের কাছে নিজেদের কথা বলতে পারেন। কিন্তু মেম্বাররা কোন অফিসে গেলে তাদেরকে পাত্তা দেয়া হয়না। তাদেরকে তুচ্ছ মনে করা হয়। ইউপি চেয়ারম্যানও ভোটে নির্বাচিত, মেম্বাররাও জনতার ভোটে নির্বাচিত। তাহলে কেন তারা অবহেলিত। চেয়ারম্যানকে মূল্যায়ন করা হলে মেম্বারদেরকেও মূল্যায়ন করতে হবে। কোন অফিসে বা অন্য কোথাও যেকোন সমস্যা হলে ১০ ইউপি চেয়ারম্যান সহজেই একত্র হয়ে নিজেদের সমস্যার সমাধান করেন। কিন্তু ১০টি ইউনিয়নের ১২০ জন মেম্বারের একত্র হবার কোন সুযোগ নেই। তারাও প্রতিমাসে সভা করতে চান। তিনি উপজেলার ইউপি মেম্বারদের সমিতি গঠনের দাবি জানান। এনায়েতপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার শাহজাহান আলী বলেন, এনায়েতপুর ইউনিয়নে কোন হাট বাজার নাই। ইউনিয়ন পরিষদের তেমন কোন রাজস্ব আদায় নাই। তাই এখানকার জনপ্রতিনিধিরা খুব কষ্টে আছেন। চাঁন্দাশ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার মিজানুর রহমান মীর্জা বলেন, বিপদে আপদে সকাল সন্ধ্যা নাই সর্বক্ষণই তারা জনগণের দোড়গোড়ায় থাকেন। গভীর রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করেন। কিন্তু তাদেরকে কেউ দাম দেয়না। সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার শিহাব রায়হান বলেন, মেম্বারদের অনেক কাজ। সকালে বাড়ি থেকে বেড় হতে হন, কিন্তু কখন বাড়ি ফিরবেন বলতে পারেন না। সরকারের যত রকমের কাজ তার সবকিছুই প্রতিটি মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে করতে হয় এই মেম্বারদের। থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাফফর হোসেন উপস্থিত চেয়ারম্যান মেম্বারদের নিজ নিজ এলাকা মাদকমুক্ত করতে থানা পুলিশকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান সোহাগ বলেন, এখন জনগণের দোড়গোড়ায় প্রশাসনের সেবা পৌঁছে গেছে। মেম্বারসহ সকল মানুষের জন্য তার অফিসের দুয়ার সব সময় খোলা। এ ছাড়া অন্য সব দপ্তরও যেন মেম্বারদের সম্মান দেন সেকথা তিনি কর্মকর্তাদের বলে দিবেন। উপজেলা চেয়ারম্যান আহসান হাবীব ভোদন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বাররা তৃণমূল প্রান্তিক পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি। মূল কাজগুলো তারাই করে থাকেন। তাদের সম্মান দিতে হবে। প্রধান অতিথি এমপি ছলিম উদ্দিন তরফতার সেলিম বলেন, ইউপি মেম্বাররা সরকারের মূল জায়গা থেকে উন্নয়ন করে থাকেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশের সকল জনপ্রতিনিধিদের ঢাকায় সমাবেশ করেছেন। সেখানে ইউনিয়ন পরিষদের কথাও উঠেছে। অচিরেই চেয়ারম্যান মেম্বারদের ভাতা বাড়ানো হবে। তিনি এলাকার ব্যাপক উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে বলেন, উপজেলার সব ইউনিয়নের প্রায় সব রাস্তা পাকাকরণ করা হয়েছে, স্কুল কলেজের ছয়তালা, চারতালা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, ৩৪ ফুট চওড়া চার লেনের রাস্তা হচ্ছে, নানাবিধ ভাতা একশ’ ভাগ দেয়া হচ্ছে। এমপি বলেন, ২০১৪ সালে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন। কি গুণের কারণে জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালে তাকে নৌকা প্রতিক দেন, কি গুণ হারানোর ফলে তাকে এবার নৌকা দেয়া হবেনা, বলে তিনি প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, আর কি কি করলে আবার তাকে মানুষ ভোট দিবে? উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে তিনি আবারো নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান।