০৬-০৭-২০২৪
পাভেল ইসলাম মিমুল রাজশাহী ব্যুরো
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার একটি স্কুলের সংস্কার কাজের অনিয়ম ধরতে নিজেই স্কুলে ছুটে গেলেন সংসদ সদস্য।
শনিবার(০৬ জুলাই) সকালে মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের অনিয়ম দেখতে যান পবা-মোহনপুর আসনের সংসদ সদস্য মোহাঃ আসাদুজ্জামান আসাদ।
পরে সেখানে তিনি বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরে স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
মোহনপুর এলজিইডি অফিসের তথ্য মতে,রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সংষ্কারের জন্য প্রায় ১৫ লাখ টাকার একটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই কাজ পান রাজশাহীর মেসার্স আলখাল্লা এন্টার প্রাইজ। তারা এরই মধ্যে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে তুলে নিয়েছেন বিল।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে,মেসার্স আল খাল্লাকে দেওয়া টাইলস,রং,থাই গ্লাস ও স্টেজের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু তিন মাস না যেতেই রং নষ্ট হয়ে গেছে। দেওয়ালে ধরেছে ময়লা। ময়লার উপরেও দেয়া হয়েছে রং। এছাড়াও মূল গেটে রং করার কথা থাকলেও সেটিও পুরোপুরি করা হয় নি। এতকিছুর পরও প্রধান শিক্ষক ঠিকাদরের সব কাজ বুঝিয়ে পেয়েছে বলে সাক্ষর করেছেন। এতে সহজেই বিল তুলে নিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এই স্কুলের সংস্কারের কাজে অনিয়মের তথ্য জানতে পেরে সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান শনিবার ঐ স্কুলে যান। সংসদ সদস্যের যাবার খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও সেখানে হাজির হন।
আসাদুজ্জামান ঐ স্কুল ঘুরে দেখেন এবং সংস্কার কাজের মান দেখেন। বিভিন্ন অসঙ্গতি ও অনিয়ম দেখে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন,প্রতিষ্ঠান প্রধান বা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে যারা আছেন তারা যদি এই কাজগুলো ঠিকভাবে বুঝে না নেন তবে আমি তো মনে করি ঠিকাদারের সাথে তাদের যোগসাযস আছে। অথবা না বুঝেই করেছেন। এটার দায় দায়িত্বতো তাদেরই নিতে হবে। যারা কাজ করেছেন তাদের ডাকা হবে। এটি নিয়ে সমস্যার সমাধান হতে হবে।
তিনি আরো বলেন,রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যে চিন্তা নিয়ে দেশটিকে গড়ে তুলতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন,যদি এভাবে কাজ হয় তবে দেশ গড়ে তোলার পরিবর্তে আমরাই এটি ধ্বংসের দাঁড়প্রাস্তে নিয়ে যাচ্ছি। এখানে এলাকাবাসীকেও সচেতন হতে হবে। এরাতো শিক্ষক সমাজ,আমাদের মাথার তাজ। তাদেরতো জোর করে কিছু কথা বলাও আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি আমাদের জন্য আপরাধ। আমি মনে করি আমাদের দেখেই ছাত্র ছাত্রীরা শিখবে।
এমপি বলেন,আমি জনপ্রতিনিধি।এগুলো দেখভাল করার দায়িত্ব আমার আছে। একটি প্রতিষ্ঠান দেখলেই তো বোঝা যায়। অন্য প্রতিষ্ঠান গুলোওতো এগুলো নিয়ে সচেতন হবে। বিদ্যালয় ভবনগুলো চকচকে থাকবে শিক্ষার্থীদের মন ভালো হবে। এই অনিয়ম আমার দেখেছি। এগুলো ঠিক করতে বলেছি। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। এটি মানুষের কষ্টে অর্জিত টাকা। এগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) নিজেই একজন লাইসেন্স ধারী ঠিকাদার।ঠিকাদারের কারণে কন্ট্রাকটারের সাথে যোগসাজসে “এ” গ্রেড টাইলস না দিয়ে “সি” গ্রেড টাইলস দিয়ে রাত্রী ১২/০১ টার সময় কাজ সম্পূর্ন করেছে। ০৬ টি দরজা না দিয়ে মাত্র ০১ টি দরজা দিয়েছে। ১০ টি ফ্যান না দিয়ে মাত্র ০২ টি ফ্যান দিয়েছে। রুমের ভিতরে প্লাষ্টিক পেইন্ট রং না দিয়ে ডিসটেম্পার রং করেছে। ছাদের নিচে সিলার না করে চুনকাম রং করেছে। বিল্ডিং এর বাহিরের রংগুলো ওয়েদার কোট না দিয়ে সাধারণ রং করেছে। পিছনের অনেক জানালার ভাঙ্গা গ্লাস মেরামত না করেই কাজ বুঝিয়া পেয়েছি বলে স্বাক্ষর (এনওসি) প্রদান করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি।
এবিষয়ে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষাক মোঃ সাহিদুজ্জামান বলেন,কাজ তো আমি করিনি। কাজতো সরকারের মাধ্যমে প্রজেক্টের কাজ। জাস্ট আমরা স্কুলে চাকুরি করি,দেখেছি আমরা। ইঞ্জিনিয়ার যেভাবে আমাকে দেখিয়ে দিয়েছেন আমি সেভাইে বুঝিয়ে নিয়েছি। আমি তো আর কাজের কিছু বুঝি না। বারবরই রঙের বিষয়ে অভিযোগ করেছি।
এবিষয়ে জানতে মোহনপুর এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মোসাঃ নুরনাহারকে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায় নি।
তবে মোহনপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) জোবায়দা সুলতানা বলেন,এমপি স্যার একটি অভিযোগ নিয়ে স্কুলে গেছিলেন। আমরাও দেখেছি। এটি ইউএনও স্যার তদন্ত করে দেখবেন। তিনি এখন ছুটিতে আছেন। তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এবিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মোঃ ইমন বলেন, আমরা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম মাফিক কাজ করেছি। তারপরও যদি অভিযোগ থাকে ইঞ্জিনিয়ার আছে। তিনি যাবেন কোন কাজের সমস্যা হলে আবারো কাজ করে দেওয়া হবে।